ঢাকাই সিনেমার ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহ। দেশীয় সিনেমার আধুনিকতা এবং ফ্যাশনের রূপকারও ছিলেন তিনি। ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব হয়ে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন এই চিত্রনায়ক। স্বল্প ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছিলেন অসংখ্য দর্শকপ্রিয় সিনেমা। সিনেমার সেই ধূমকেতুর আলো নিভে যায় ১৯৯৬ সালে। ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। নায়কের রহস্যজনক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার পরই তার ভক্তরা ক্ষোভে ফুলে-ফেঁপে ওঠেন।গতকাল শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ছিল সালমান শাহ’র ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। দীর্ঘ এই সময়েও তার মৃত্যু নিয়ে রয়ে গেছে রহস্য।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআইয়ের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। তাকে খুন করা হয়নি। চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্কের কারণে স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ থেকেই আত্মহত্যা করেছেন এই নায়ক।এদিকে, সম্প্রতি টেলিভিশনের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নায়কের মা নীলা চৌধুরী মামলাটি ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি, ভারত থেকে এজেন্ট এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার সম্পর্কে নীলা চৌধুরীর ভাষ্য, ‘তাদের সঙ্গে বনজ কুমারের সম্পৃক্ততা ছিল। এই বনজ কুমারকে তারা অনেক টাকা দিয়েছে। সালমান শাহ মৃত্যুর পর আমরা জেনেছিলাম যে, ভারতীয় কাউকে ভাড়া করে এনে সালমান শাহকে হত্যা করিয়েছে তারা। সুকুমার রঞ্জন সে সময় সংসদ সদস্য ছিলেন, তিনি একজন ভারতীয় “র”-এর এজেন্ট। তিনি আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন।’অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে একটা মাফিয়ার আন্ডারে ছিলাম। এখন আমরা মুক্ত, এ হত্যার বিচার প্রয়োজন। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।’
নায়কের মা কথা বলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরার বিষয়েও। তার ভাষ্য, ‘সামিরা তিনটি বিয়ে করল। সে যে খারাপ তা প্রমাণ হয়ে গেছে। একটি ঘরে থাকতে পারেনি সে। তার বাবাও অনেক কিছু করেছে। ইদানীং তাদের দেখা যাচ্ছে না। তার মা, সে সালমান শাহ হত্যা মামলার আসামি। অথচ একটা আসামিকেও কখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো না। তাদের আটক করা হলো না। হত্যা মামলার আসামি হলে তো সঙ্গে সঙ্গে আটক করা হয়। এরপর আইন যা বলবে তাই হবে। কিন্তু তা হয়নি।’
উল্লেখ্য, বিটিভিতে শিশুশিল্পী হিসেবে শোবিজে পা রাখেন সালমান শাহ। এরপর অভিনয় করেছেন নাটক ও বিজ্ঞাপনে। তাকে দেখা গেছে ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ নাটকে।
১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে সিনেমায় পা রাখেন সালমান শাহ। অভিনয় করেন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায়। প্রথম কাজ দিয়েই দর্শকদের মন জয় করে নেন তিনি। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি সুদর্শন এই অভিনেতাকে। ১৯৯৩-১৯৯৬ সাল, মাত্র তিন বছরে তিনি অভিনয় করেছেন ২৭টি সিনেমাতে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সিনেমাই ছিল সুপারহিট।
সালমান শাহ অভিনীত সিনেমাগুলো হলো- ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (বিপরীতে মৌসুমী), ‘তুমি আমার’ (শাবনূর), ‘অন্তরে অন্তরে’ (মৌসুমী), ‘কন্যাদান’ (লিমা), ‘জীবন সংসার’ (শাবনূর), ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ (শাবনূর), ‘সুজন সখী’ (শাবনূর), ‘বুকের ভেতর আগুন’ (শাবনূর), ‘এই ঘর এই সংসার’ (বৃষ্টি), ‘স্নেহ’ (মৌসুমী), ‘বিচার হবে’ (শাবনূর), ‘প্রেমযুদ্ধ’ (লিমা), ‘মহা মিলন’ (শাবনূর), ‘তোমাকে চাই’ (শাবনূর), ‘বিক্ষোভ’ (শাবনূর), ‘আশা ভালোবাসা’ (শাবনাজ), ‘মায়ের অধিকার’ (শাবনাজ), ‘আঞ্জুমান’ (শাবনাজ), ‘আনন্দ অশ্রু’ (শাবনূর), ‘প্রেম পিয়াসী’ (শাবনূর), ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ (শাহনাজ), ‘প্রিয়জন’ (শিল্পী), ‘শুধু তুমি’ (শ্যামা), ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ (শাবনূর), ‘স্বপ্নের নায়ক’ (শাবনূর), ‘দেন মোহর’ (শাবনূর) ও ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ (শাবনূর)।