রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও রাশিয়া থেকে কম দামে তেল আমদানি করে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে পেরেছিল ভারত। কিন্তু তাদের সেই সুদিন শেষ হতে যাচ্ছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চলমান লোকসভা নির্বাচনের পর দেশের বাজারে জ্বালানির দাম বাড়তে পারে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে অপরিশোধিত তেলের আমদানি খাতে নিট ৯ হাজার ৬১০ কোটি ডলার ব্যয় করেছিল ভারত। পশ্চিম এশিয়ার সমস্যার জেরে সম্প্রতি তেলের দাম নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। ফলে আমদানির পরিমাণ না বাড়লেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেই ব্যয় ১০১ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ১০০ কোটি থেকে ১০৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে ইক্রা। খবর ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। সেই সঙ্গে ভারতের মূল্যায়ন সংস্থাটির সতর্কবার্তা, ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত তীব্র হলে তেল আমদানির ব্যয় আরও বাড়তে পারে। তেলের চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ আমদানি করে ভারত; এই পরিস্থিতিতে ভারত আরও বিপাকে পড়তে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এর জেরে সারা পৃথিবীতে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি শুরু হয়, তাতে তেলের চাহিদা কমে যায়। পরিণতিতে তেলের দামও কমতে শুরু করে। এরপর প্রায় এক বছর অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের কম ছিল। পেট্রল-ডিজেলের দাম দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অপরিবর্তিত রেখে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করছিল, তেল কোম্পানিগুলো বিশ্ববাজারের চড়া দামে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সাধারণ মানুষের গায়ে তার আঁচ লাগতে দেয়নি।
সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার আগে উভয় তেলের দাম লিটারপ্রতি দুই টাকা করে কমানো হয়। ইন্ডিয়ান অয়েলের দাবি, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তাদের নিট মুনাফা সে কারণেই কমে অর্ধেক হয়েছে—কমেছে শেয়ারের দাম। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করায় ভারতের নীতিনির্ধারণী মহল চিন্তায় পড়ে গেছে। ভোট শেষ হওয়ার পর পেট্রোপণ্যের দাম কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
ইউক্রেনে আক্রমণের জেরে রাশিয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বৃদ্ধি করে ভারত। এতে তারা রাশিয়ার কাছ থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে তেল পেয়েছে। ইক্রার হিসাব, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত ৫১০ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছিল; গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (এপ্রিল-ফেব্রুয়ারি) তা বেড়ে হয় ৭৯০ কোটি ডলার।
তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাশিয়ার তেলের ছাড় কমতে শুরু করে। এক সময় রাশিয়ার তেল কেনায় ব্যারেলপ্রতি যেখানে ২৫ থেকে ৩০ ডলারের সুবিধা পেত ভারত, এখন তা ৪ ডলারে নেমে এসেছে। বিশ্ববাজারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় রাশিয়া যেমন ছাড় কমিয়েছে, তেমনি রাশিয়ার তেলের পরিবহন খরচও বেড়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এখন ইক্রা বলছে, ভারতের তেল আমদানির রুশনির্ভরতা ও রুশ তেলে ছাড় একই থাকলেও চলতি অর্থবছরে এই খাতে খরচ বেড়ে হতে পারে ১০ হাজার ১০০ থেকে ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। ডলারের দর ৮৫ রুপি ধরে এই হিসাব করা হয়েছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম এখন ৮৩ ডলারের ওপরে। ইক্রা বলছে, তেলের দর ৯৫ ডলার হলে আমদানি খরচ বাড়তে পারে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।