প্রায় আড়াই লাখ টাকা বাকি খেয়ে নিরুদ্দেশ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এবং আওয়ামীপন্থী এক শিক্ষক।এতে মাথায় হাত পড়েছে ক্যাম্পাস সংলগ্ন দোকানিদের। পাওনা টাকা ফেরত পেতে দোকানিরা তাদের কাছে বারবার ফোন করলে ‘টাকা দিচ্ছি’ বলে ফোন কেটে দেস
ক্যাম্পাস সংলগ্ন দোকানিদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী ও আওয়ামীপন্থী এক শিক্ষক বিভিন্ন খাবার দোকান, ভাতের হোটেল, ডেকোরেশন ও চায়ের দোকানে বাকি রেখে যাচ্ছিলেন। অনেক সময় আগের বাকি টাকা চাইলে নেতাকর্মীরা জোর করেও খেয়ে যেতেন। আবার এমনও হয়েছে- কর্মীরা খেয়ে নেতার নাম করে চলে গেছেন। পরে টাকা চেয়ে পাওয়া যায়নি। এদিকে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা ক্যাম্পাস ছাড়া হওয়ায় বাকি টাকা আদায় শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবু সাঈদ হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত পলাতক শিক্ষক মশিউর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন পার্কের মোড়ের (বর্তমান আবু সাঈদ চত্বর) দোকানগুলোতে ৭৬ হাজার ৮৭৭ টাকা বাকি রেখেছেন। এর মধ্যে ‘মারিয়াম প্লাজা’র এক দোকানে ৪০ হাজার ৪৫০, লিফা স্টোরে ৪৬৩০, ‘শাহ আলম টি অ্যান্ড কফি হাউস’-এ ৫ হাজার ৩৭৭, মাহবুব মাল্টিমিডিয়ায় ১ হাজার ৪২০ এবং চকবাজারের রুম্মান জেনারেল স্টোরে প্রায় ২৫ হাজার টাকা বাকি রেখেছেন।
‘সিনহা হোটেলে’ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া ৬৫০ টাকা, সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান শামীম ৫৫০ টাকা, মামুন সবুজ ১৩০০ টাকা, বাঁধন ৫৫০ টাকা, আক্তার ১২৯৫ টাকা, আরিফ ২০০০ টাকা, আল আমিন ৪৬৮৩ টাকা এবং শুভ ১৫০০ টাকাসহ মোট ১২ হাজার ৫২৮ টাকা বাকি খেয়েছেন।
‘ভাই বোন টি স্টোর’-এ পোমেল বড়ুয়া ৯ হাজার ৮৩৫ এবং মাহফুজুর রহমান শামীম ৮ হাজার ১৯৫ টাকাসহ মোট ১৮ হাজার ৩০ টাকা বাকি খেয়েছেন।‘আনোয়ার হোসেন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’ থেকে ছাত্রলীগ কর্মী কনক ২ হাজার ৬৫৫ টাকা এবং পলক চাকমা ৭৭৫ টাকাসহ অন্য কর্মীরা মিলে সর্বমোট ১১ হাজার ৯০৫ টাকা বাকি খেয়েছেন।
‘শাহ আলম টি এন্ড কফি হাউস’-এ তুষার কিবরিয়া ৫৩ হাজার ১১৯ এবং পোমেল বড়ুয়া ৬ হাজার ৭৩৮ টাকাসহ মোট ৫৯ হাজার ৮৫৭ টাকার বাকি খেয়েছেন। ‘ঢাকা তেহরী হাউস’-এ সিটন ১ হাজার ৪৮০ টাকার বাকি খনে।জয়া ডেকোরেশন’ থেকে সাবেক নেতা মাহমুদ ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং সাইফুল ২ হাজার ২০০ টাকাসহ মোট ৬ হাজার ৭০০ টাকা বাকি রেখেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ছোট ছোট চা স্টলগুলো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকার মতো বকেয়া পাবেন বলে জানান দোকানীরা।
জয়া ডেকোরেশনের মালিক বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের ডেকোরেশন ভাড়া নিয়ে ভাড়া কম দিতেন বাবুল মিয়া। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বাকির টাকার জন্য বেরোবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের খুঁজছেন দোকানিরা। অনুষ্ঠান হলে চাঁদা দিতে হতো। আমার টাকা বকেয়া টাকা এখনো পাইনি।’ এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখতার ইলাহী হলের ডাইনিং ম্যানেজার জুয়েল কার কাছে কত টাকা পান তা বলতে না পারলেও বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিং ম্যানেজার দৌলত সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে ৫২ হাজার টাকা পাওয়া যাবে বলে জানান।
দোকানিরা আরও জানান, ‘আমরা বারবার কল দিতেছি টাকার জন্য, কিন্তু টাকা দিব দিব বলে কিন্তু তারপরও দেয় না। অনেকেই কল ধরছে না আবার মোবাইল বন্ধ। আমরা চাই, আমাদের টাকা যাতে ফেরত দিয়ে যায়।’এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে একমাত্র দায়িত্বে বহাল থাকা ব্যক্তি রেজিস্টার আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো দোকানির অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে বিষয়টি দেখা হবে। তবে এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় ভেতরের হলে ভাল হতো।’