উন্নতির মহাশিখরে আরোহণ করছে বাংলাদেশ। একের পর এক দুর্ভেদ্য প্রতিকূলতা জয় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। বাস্তব হতে চলেছে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা। বঙ্গবন্ধুকন্যা এনে দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি। অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য মতে, এই সাফল্যে অবিচ্ছেদ্য অবদান চট্টগ্রাম বন্দরের। দেশের যা কিছু অর্জন, তার মূলে এই বন্দর। দখিন কোণের শহর চট্টগ্রামের বুক চিরে বয়ে চলা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় ১৮৮৬ সালে যাত্রা শুরু। ১৩৬ বছরে সেই বন্দরই দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা। বন্দর কর্তৃপক্ষ একে আখ্যায়িত করেছে ‘সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার’ বলে। কেননা এই বন্দর বাংলাদেশের শির উঁচু করেছে বিশ্বভুবনে। বাণিজ্যে দিয়েছে গতি। স্বপ্নের সঙ্গে সমন্বয় করে এগিয়ে চলছে দুর্বার।
শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে উঠে আসে চট্টগ্রাম বন্দরের জানা-অজানা অধ্যায়। তিলে তিলে উত্থান থেকে শুরু করে একটি দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার গল্প তুলে ধরেন তাঁরা। দীর্ঘ শত বছরের পটপরিবর্তনে বদলে গেছে অনেক কিছু। স্মার্ট পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় বন্দর এখন বেশ গতিশীল। অথচ কয়েক বছর আগেও ছিল ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ, শ্রমিক আন্দোলন আর জাহাজজটের নিত্য অপবাদ। ছিল না আধুনিক প্রযুক্তিসই যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল। এখন সেসব অভিযোগ নেই, নেই অসন্তোষও। অনেক ঘাটতি ঘুচিয়ে বন্দর এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বদরবারে খেতাব কুড়িয়েছে ‘জিরো ক্রাইম’ বা শতভাগ অপরাধমুক্ত বন্দরের।
জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের যা কিছু অর্জন, তার মূলে চট্টগ্রাম বন্দর। ভবিষ্যতে যে বন্দরই আসুক না কেন, ঐতিহ্যের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব ও অবদান অটুট থাকবে। কেননা এই বন্দর এক দিনে এই পর্যায়ে আসেনি। এর সঙ্গে শত-সহস্র বছরের ঐতিহ্য মিশে আছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব লাভের অংশ থেকে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং রোল মডেল। তবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরসহ অন্য বন্দরগুলো চালু হলে একটি সুন্দর প্রতিযোগিতা ও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে।’
কিছু জায়গায় ঘাটতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত যানবাহন রাখার কোনো জায়গা নেই। গাড়িগুলো রাস্তা দখল করে থাকছে। কিছু বেসিক জায়গায় অবশ্যই কাজ করতে হবে। কাস্টমসের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলোও নিরসন করা জরুরি। নইলে বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল হবে না। তবে কয়েক বছর ধরে শ্রমিক অসন্তোষ না থাকাটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এর ফলে বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে। যার সুফল পাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা।
লক্ষ্যমাত্রায় বাধা হতে পারেনি বৈশ্বিক সংকট
চলমান বৈশ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব দক্ষতার মাধ্যমে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এতে শুধু গতিবৃদ্ধিই নয়, অর্থও সাশ্রয় হয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বেশির ভাগই সামাল দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের মোট জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার (জিডিপি) যেখানে ৭ থেকে ৮ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১ শতাংশ।
জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক চেষ্টার পাশাপাশি সরকারের সদিচ্ছায় বিশ্বনন্দিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজন বন্দরকে এনে দেয় ভিন্ন মাত্রা। ফলে বন্দরের গতিশীলতা অবিশ্বাস্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ২০১৯ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড গড়ে তিন মিলিয়ন ক্লাবে প্রবেশের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে চট্টগ্রাম বন্দর। সে সময় ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল। তবে করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা এতে রাশ টানে। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, কভিড পরিস্থিতির মধ্যে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ২৮ লাখ টিইইউতে নেমে আসে। তবে ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগেনি। পরের বছরই তা আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ একক কনটেইনারে পৌঁছে। ২০২২ সালে তা একটু কমে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউ এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্দরের টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা, গেট অপারেশন সিস্টেমসহ সব কিছুতে ডিজিটাইজেশন হয়েছে। একসময় জেটি সরকাররা সহস্র কনটেইনারের ভিড়ে নিজের কনটেইনার খুঁজে বের করতেন। এখন সেই দুর্ভোগ নেই। সাধারণ একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে মুহূর্তেই কনটেইনারের লোকেশন বের করা যাচ্ছে। এখন কেবল একটি ফিঙ্গার ট্রিপে সব কিছু পেয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সামগ্রিক ডকুমেন্টেশন সিস্টেম, যেটি কার্গো ডেলিভারি ডিসচার্জ থেকে শুরু করে একেবারে দোরগোড়ায় ডেলিভারি পর্যন্ত পুরো জিনিসটাই কম্পিউটারাইজড। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক গতি ফিরেছে।
সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোগ
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষায় জাহাজের কনটেইনার লোড-আনলোড ও পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বিভিন্ন রকমের ক্রেন। জানা গেছে, ২০২২-২৩ সালে বন্দরের বহরে যুক্ত হয় চারটি মোবাইল ক্রেন, যার মধ্যে দুটি ৫০ টন ও দুটি ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন। এ ছাড়া ছয়টি রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেন, ৩৪টি কিউজিসি এবং দুটি কনটেইনার মোভার কেনা হয়। শিগগিরই প্রায় ৯১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৪টি যন্ত্রপাতি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।
চবক চেয়ারম্যান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিন দিন তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলছে। এটা বলতে পারি, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান যে ব্যবস্থা সেটা আগের যেকোনো সময় থেকে অনেক ভালো। বিশেষ করে গত ১০ থেকে ১২ বছরে বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এতে সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন টার্মিনাল সংযুক্ত হয়েছে। নতুন জেটি সংযুক্ত হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, নিয়মিতভাবে চট্টগ্রাম বন্দর ও অন্যান্য বন্দরের উন্নয়ন হচ্ছে। চমৎকারভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীমহল, দেশে-বিদেশে তারা দিন দিন ভালো পোর্ট সার্ভিস পাচ্ছে। সার্ভিস পাচ্ছে বলেই নানা ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ দেশে বাড়ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরের আলাদা ১৭টি শেডে রাখা হয়েছে রাসায়নিক পদার্থ, গাড়ি ও অন্যান্য সাধারণ মালপত্র। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যগুলো অক্ষতভাবে রাখার সর্বাঙ্গীণ ব্যবস্থা রয়েছে। বন্দরের ভেতরে দিন বা রাতের কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। কর্মচঞ্চল ২৪ ঘণ্টা মালপত্র ঢুকছে কিংবা বের হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ এলাকাগুলোর প্রতিটি ব্লকে নিরাপত্তাকর্মীদের সক্রিয় অবস্থান দেখা গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষায় নিরাপত্তা চৌকি থেকে প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
অপরাধমুক্তিতে সুনাম বেড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে
মাত্র দেড় দশক আগেও চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর ডাকাতপ্রবণ হিসেবে পরিচিত ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোস্ট গার্ডের পদক্ষেপে এই জলসীমা এখন অপরাধমুক্ত। সেই চুরি-ডাকাতি নেই। এর ফলে বন্দরের সুনাম বেড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বাণিজ্যিক জাহাজে সংঘটিত সশস্ত্র ডাকাতি, দস্যুতা ও চুরির ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে রেটিং প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংগঠন রিক্যাপ। সেখানে গত কয়েক বছর চট্টগ্রাম বন্দরকে জিরো ক্রাইম বা অপরাধমুক্ত বন্দর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চবক চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় বন্দরের অভ্যন্তরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে না বলে জানান কর্মকর্তারা।
রিক্যাপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় ২০১৯ সালে দস্যুতার ঘটনা শূন্যে নেমে আসে। সে বছর বিভিন্ন দেশের জলসীমায় ৮২টি ঘটনা রেকর্ড করেছে রিক্যাপ। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগরের জলসীমায় কোনো ঘটনা ঘটেনি। এরপর আর কোনো বছরই দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি। বিশাল জলসীমায় দস্যু দমনের সাফল্য বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
শুধু জলসীমা নয়, বন্দরের অভ্যন্তরেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাঁরা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা বিশ্বমানের। বন্দরের প্রায় পুরো অংশই সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে। বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও বলেছেন, কয়েক বছর আগেও বন্দরে পণ্য রাখা ছিল অত্যন্ত অনিরাপদ। এখন সেই দুশ্চিন্তা নেই। কর্তৃপক্ষের বিচক্ষণ নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে বন্দর এখন শতভাগ নিরাপদ জায়গা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল মোস্তফা আরিফ-উর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর একটি আইএসপিএস কমপ্লায়েন্ট বন্দর। বন্দরের সংরক্ষিত ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় ৯৮ শতাংশ সিসিটিভি মনিটরিংয়ের আওতায়। অত্যাধুনিক সিসিটিভি কন্ট্রোল সেন্টার থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিটি প্রবেশপথে ‘অ্যাকসেস কন্ট্রোল’ রয়েছে। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বন্দরের নিজস্ব ফায়ার ইউনিটে রয়েছে ফায়ার ফাইটিং ফোম টেন্ডার, রেসকিউ ভেহিকল, রিকভারি ভেহিকল। বন্দর এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্দরের ভেতরে ছিঁচকে চুরি বা কোনো কর্মী দ্বারা ছোটখাটো চুরির টুকটাক অভিযোগ মাঝেমধ্যে ওঠে। এগুলো আসলে ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। সামগ্রিকভাবে এখানে অপরাধ কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। রিক্যাপের প্রতিবেদনেও সে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ‘জিরো পাইরেসি পোর্ট’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যে খেতাব পাওয়া গেছে, তা সত্যিই গর্বের।
বন্দর ব্যবহারকারীদের একজন ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট হায়দার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার মো. বেলাল উদ্দিন। বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা অতীতের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। একসময় আমাদের নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হতো। মালপত্র রাখলে অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যেত না। এখন আমরা যারা পণ্য আমদানি-রপ্তানি বা পণ্য খালাস প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, তাদের জন্য বন্দরের ভেতরে আলাদা শেড রয়েছে। মালপত্রের জন্য আমরা যথেষ্ট নিরাপত্তা পাচ্ছি। এটি অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক দিক।’
বছরে ১২০০ কোটি টাকা সাশ্রয়
ব্যয় সংকোচন বা সাশ্রয়ের দিক থেকেও অনন্য প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চেয়ারম্যানের সুদক্ষ নেতৃত্বে বিদায়ি বছরে অন্তত ১২০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষণ বিভাগের তথ্যে জানা গেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষার কারণে রাজস্ব আয়ও স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এদিকে আমরা নানাভাবে ব্যয় সংকোচন করে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করেছি। সেটার সুফলও অচিরেই দেখা মিলবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে পেরেছি আমাদের কর্মদক্ষতার মাধ্যমে। বন্দর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বন্দরের প্রতিটি স্টেকহোল্ডারের ভূমিকা রয়েছে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পেছনে তাদের কঠিন পরিশ্রম, ২৪ ঘণ্টা কাজ করার যে প্রবণতা, তাদের যে শ্রম-ত্যাগ, এটা হলো অন্যতম কারণ।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডর এম ফজলার রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ হয় জাহাজ সেবা ও মালপত্র হ্যান্ডল খাত থেকে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময় রাজস্ব আয় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, রাজস্ব ব্যয় প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে এবং রাজস্ব উদ্বৃত্ত প্রায় ২২ শতাংশ বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের বন্দরগুলোর কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যার নিরিখে প্রতিবছর শীর্ষ ১০০ বন্দরের তালিকা করে লন্ডনভিত্তিক শিপিং বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্ট। কয়েক বছর ধরে এই তালিকায় শীর্ষ ১০০ বন্দরের মধ্যে অবস্থান করছে চট্টগ্রাম বন্দর। সর্বশেষ ২০২৩ সালের তালিকায় এর অবস্থান ৬৭তম।