পেনাল কোডের আওতায় শাস্তির বিধান রেখে বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইনÑ২০২৪ এর খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়া সরকারের মধ্যে ভিসা চুক্তি হচ্ছে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়া সরকারের মধ্যে মিউচুয়াল এক্সেমশন অব ভিসা (পারস্পরিক ভিসার প্রয়োজনীয়তা থেকে রেহাই) রিকয়ারমেন্টস চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।
জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতি-২০২৪ এর খসড়া এবং নেদারল্যান্ডস ও মরিশাসের সঙ্গে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে হওয়া চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপশি মন্ত্রিসভা ‘ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৪’ এর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছে।
এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প এলাকা থেকে সরে যাচ্ছে শাহবাগ থানা। শাহবাগের সাকুরা ভবন এলাকায় এটি স্থানান্তরের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বনশিল্প করপোরেশেন আইনের খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছেÑ করপোরেশনের চেয়ারম্যান, পরিচালক, মহব্যাবস্থাপক, নিরীক্ষক, কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী গোপনীয়তা ও বিশ্বস্ততা লঙ্ঘন করলেÑ এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তিনি পেনাল কোডের ১৮৬০-এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী কারাদ-, অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
তা ছাড়া কোনো ব্যক্তি, করপোরেশনের লিখিত সম্মতি ছাড়া কোনো প্রসপেক্টাস বা বিজ্ঞাপনে করপোরেশনের নাম ব্যবহার করলেও প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী তিনি অপরাধী হবেন। এক্ষেত্রে তিনিও পেনাল কোডের ১৮৬০-এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী কারাদ-, অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছেÑ সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এবং বন ও এর উপাদনসমূহের টেকসই ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাঠ, বাঁশ, বেত ও অন্যান্য বনজ উপকরণের সঙ্গে অন্যান্য পদার্থ দিয়ে উৎপন্ন গৃহস্থালি, দাপ্তরিক, বাণিজ্যিকসহ অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত রাবার, আসবাবপত্র ও সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনে পণ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়া করে উৎপাদিত পণ্য বিপণন ও রপ্তানিসহ বনশিল্পের উন্নয়ন ও এ সংক্রান্ত কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে ‘ফরেস্ট ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট অর্ডিন্যান্স-১৯৫৯কে যুগোপযোগী করে এই আইনটি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন বৃক্ষ বা বনজসম্পদ, এ সংক্রান্ত শিল্প ইউনিট, শিল্পপণ্য উন্নয়নে এবং এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে স্কিম, প্রোগ্রাম বা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে।
করপোরেশনের অধিক্ষেত্রের বৃক্ষ বা বনজসম্পদ বা শিল্প ইউনিট বা শিল্পপণ্য এবং রাবার গাছ, মধু, আগর, ঔষধি গাছ, বনজশিল্প ও কৃত্রিম রাবার বা একই রকম বৃক্ষ বা সম্পদ বা পণ্যের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়ের মাধ্যমে লাভজনক করতে ব্যবস্থা নেবে।
সরকার করপোরেশনের একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করবে। তিনি এই সংস্থার প্রধান নির্বাহী হবেন এবং পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন। সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে করপোরেশনের।
করপোশেনের অনুমোদিত শেয়ার মূলধন হবে এক হাজার কোটি টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন হবে তিনশ’ কোটি টাকা। প্রতিটি ১০ টাকা হারে ৩০ কোটি সাধারণ শেয়ার থাকবে। তবে সরকারের ন্যূনতম শেয়ার থাকবে শতকরা ৫১ ভাগ এবং জনসাধারণের জন্য সর্বোচ্চ শতকরা ৪৯ ভাগ শেয়ার থাকবে। তা ছাড়া বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের একটি নিজস্ব তহবিল থাকবে।
বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়া সরকারের মধ্যে ভিসা চুক্তি ॥ বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়া সরকারের মধ্যে ভিসা চুক্তি হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়া সরকারের মধ্যে মিউচুয়াল এক্সেমশন অব ভিসা রিকয়ারমেন্টস চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২৯টি দেশের সঙ্গে এ রকম চুক্তি আছে। এটি নিয়ে মোট ৩০টি হলো। এই চুক্তি করা ডিপ্লোম্যাটিক এবং অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ৩০ দিন পরস্পরের দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন।
জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন ॥ জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতি-২০২৪ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতি-২০২৪ এর খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। এটির উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয় ছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আমাদের একটি আইন আছে, বাংলাদেশ পরিবশে সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এবং এর আওতায় বাংলাদেশ জীবনিরাপত্তা বিাধিমালা রয়েছে।কিন্তু একটি নীতিমালার অভাবে বিভিন্ন ফোরামে আমাদের বলা হচ্ছিল নীতিমালা করার জন্য, এজন্য নীতিমালা করা হয়েছে।
জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, এখন অনেক রিসার্চ হচ্ছে। রিসার্চ যেন নিরাপদ হয়, যাতে রেগুলেট করতে পারি, সে জন্য এটি করা হয়েছে। কোনো একটি ভ্যারাইটি সরাসরি বাজারে আসতে পারবে না। সরকারের অনুমোদন লাগবে। সরকারের অনুমোদন ছাড়া বাজারে আসতে পারবে না। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কি নাÑ সেটি আগে ভ্যারিফায়েড হবে, পরিববেশ মন্ত্রণালয় এটি করবে।
দুই দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর আরোপ পরিহারে চুক্তি অনুসমর্থন ॥ নেদারল্যান্ডস ও মরিশাসের সঙ্গে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে হওয়া চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধসংক্রান্ত সংশোধিত চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যাতে দ্বৈত কর পরিহার করা হয়, সেজন্য আমাদের চুক্তি সই করতে হয়। এটি স্বাক্ষরের পর সেটি অনুসমর্থন করতে হয়। এটি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। গত ১২ মার্চ সই করা হয়েছিল, এই বৈঠকে অনুসমর্থন করা হলো।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধসংক্রান্ত সংশোধিত প্রটোকল অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটিও একই রকম।’
ড্রেজিং নীতিমালা : ২ মন্ত্রণালয়কে সমন্বয়ের নির্দেশ ॥ ‘ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৪’ এর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এই নীতিমালাটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে মন্ত্রিসভা সমন্বয়ের নির্দেশনা দেয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই নীতিমালার উদ্যোক্তা ছিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এখানে মূলত আমরা যে ড্রেজিংগুলো করি, সেই ড্রেজিং করায় তিনটি বিষয়ে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি যে ম্যাটেরিয়াল আছে, সেটি কিভাবে ম্যানেজমেন্ট করতে পারি, সেটি নিয়েই তারা নীতি নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় যেহেতু ড্রেজিং করে, একই ধরনের একটি নীতিমালা তাদেরও আছে। তখন মন্ত্রিসভা থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, ওই নীতিমালার সঙ্গে এটি সমন্বয় করে যেন পরবর্তী সময় নিয়ে আসে। তারপর তারা অনুমোদন করবেন।
সরে যাচ্ছে শাহবাগ থানা ॥ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়ে) (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প এলাকার অভ্যন্তর থেকে শাহবাগ থানা স্থানান্তরের বিষয়টি মন্ত্রিসভার নির্দেশনার জন্য বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।
মন্ত্রিসভা এটি সরিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সোওরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রকল্পের কাজ চলছে। এই কাজের প্রতিবন্ধতা দূর করতে এটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ লক্ষ্যে শাহবাগের সাকুরা ভবন এলাকায় ১৭ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে এটি স্থানান্তর করা হবে।