কখনো কখনো মুখ বেঁকে যাওয়া মানুষ আমরা দেখে থাকি। মুখ একপাশে বেঁকে যাওয়াকে বলে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস। এটি দুই ধরনের-আপার মোটর নিউরন ও লোয়ার মোটর নিউরন নিউরন। আপার মোটর নিউরন টাইপে অর্ধেক মুখের শুধু কপাল ছাড়া চোখ থেকে নিচের অংশ একদিকে থেকে বেঁকে যায়। লোয়ার মোটর নিউরন টাইপে পুরো মুখের অর্ধেক অংশ একদিকে বেঁকে যায়। আপার মটর নিউরন টাইপ সাধারণত ব্রেইন স্ট্রোক থেকে হয়ে থাকে। স্ট্রোক দুভাবে আক্রান্ত করে-রক্তনালি ব্লকজনিত ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত।
স্ট্রোক ইচ্ছা করলে প্রতিরোধ করা সম্ভব। যাদের রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজ বেশি, তাদের তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কোলেস্টরেল বেশি থাকলে তা ওষুধ, ডায়েটিং ও ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে সকাল ও রাতে দুটি পাতলা রুটি, দুপুরে মাত্র এক কাপ ভাতের সঙ্গে প্রয়োজনমতো মাটির ওপর ফলানো সবজি ইচ্ছেমতো খেতে হবে। রাতে দুধ ও ফল বা হালকা খাবার খাওয়া যেতে পারে। স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে হলে প্রতিদিন ৪০ মিনিট জোর পায়ে হাঁটতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কথায় বলে, এক বেলা ভাত না খেলেও চলবে কিন্তু এক বেলা প্রেসারের ওষুধ না খেলে চলবে না। ভাত কম খেতে হবে। ধূমপান, মদ্যপান, ফাস্ট ফুড বর্জন করতে হবে। অনেকেই প্রেসারের ওষুধ অনিয়তিভাবে খেয়ে থাকেন। এতে যে কোনো সময় রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হতে পারে।
স্ট্রোক ছাড়াও মস্তিষ্কের কিছু টিউমার, প্রদাহ বা মটর নিউরন ডিজিজ আপার মোটর টাইপ ফেসিয়াল প্যারালাইসিসের জন্য দায়ী। লোয়ার মোটর টাইপ ফেসিয়াল পালসির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ফেসিয়াল নার্ভে প্রদাহ। এটাকে বলে বেল’স পালসি। সাধারণত প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে পঁচিশজনের ফেসিয়াল পালসি হয়ে থাকে। ফেসিয়াল পলসির প্রকৃত কারণ যদিও অজানা, তবে কিছু ক্ষেত্রে হার্পিস সিমপ্লেক্স ও ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাসজনিত প্রদাহকে এজন্য দায়ী করা হয়। রোগীর অর্ধেক মুখ (চোখ থেকে নিচের অংশ) বেঁকে যায়, জিহ্বায় স্বাদ থাকে না। আক্রান্ত দিকের কানে শব্দ বেশি হয় এবং আক্রান্ত দিকের চোখ বন্ধ করতে পারে না।চিকিৎসা : ফেসিয়াল প্যারালাইসিস রোগীকে দ্রুত নিউরোসার্জারি বা নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে, যাতে দ্রুত রোগের কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা যায়। লোয়ার মোটর পালসি বা বেল’স পালসি হলে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম ৩ দিনের মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রেডনিসোলন নামক স্টেরয়েড শুরু করতে হবে। তাতে মুখ বেঁকে যাওয়ার তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে। চোখ বন্ধ করতে না পারায় চোখ শুকিয়ে কর্নিয়ায় ঘা হতে পারে। তাই চোখের কৃত্রিম পানির ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। রাতে চোখে মলম লাগিয়ে চিকিৎসকের শেখানো নিয়মমতো চোখ বন্ধ করে রেখে ঘুমাতে হবে ও নিয়মিত মুখের কিছু ব্যায়াম করতে হবে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করা গেলে ৩ থেকে ৯ মাস পর বেল’স পালসি একেবারে ভালো হয়ে যেতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে বেঁকে যাওয়া মুখ নিয়েই চলতে হতে পারে আজীবন।