কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক। আন্দোলনের ছাত্র-জনতার জয়ের পরও চুপ ছিলেন না এই অভিনেত্রী। কথা বলেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। দেশে নৈরাজ্য ও দুষ্কৃতকারীদের প্রতিহত করতে সবাই সজাগ থাকার আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি।
এবার দেশে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন চমকে। ঢাকা থেকে ছুটে গেছেন ফেনীতে। লাইফ জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে এই অভিনেত্রী জানালেন, সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি। সেখানে যারা উদ্ধার ও ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন বা যেতে চাইছেন, তাদের জন্য দিলেন পাঁচটি বার্তা।
গতকাল শুক্রবার বিকালে এক ভিডিওবার্তায় চমকের প্রথম পরামর্শ ‘যারা আজ বা কাল বোট নিয়ে আসছেন বা আসতে চাইছেন তারা একটি বিষয় মাথায় রাখবেন, আপনাদের বোটের ক্যাপাসিটি কয়জনের। ধরুন যদি বোটের ক্যাপাসিটি ১২ জনের হয় আর আপনারা ১২ জনই চলে আসেন বোট নিয়ে কিংবা বোটে চেপে ১২ জনই রেসকিউ করতে পানিতে নেমে যান, তাহলে আপনারা রেসকিউ করবেন কাকে! সেজন্যই এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এরপর চমক নজর রাখতে বলেন বোটের ইঞ্জিন চালানোর তেলের বিষয়ে। তার মতে, ‘আপনারা কতটুকু পথ পাড়ি দেওয়া কিংবা কয় ঘণ্টা চালানোর জন্য বোটের তেল আনছেন সেটা জেনে রাখা জরুরি। কারণ সেই হিসাব না থাকলে আপনারা রেসকিউ করতে গেলেন, কিন্তু ফেরার পথে তেল শেষ হয়ে গেল! তখন তো উল্টো বিপদ। সেজন্যই তেলের হিসাবটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এরপর চমক গুরুত্ব দেন ম্যাপিংয়ে। তার কথায়, ‘একটি পয়েন্টে একজন লোক থাকা এবং উদ্ধারের জন্য একটি বোট বেরিয়ে যাওয়ার সময় ম্যাপিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে লোকটি পয়েন্টে থাকবেন তার কাছে হিসাব থাকতে হবে কয়টা বোট গ্রামের কয়দিকে গেছে। তা না হলে দেখা যাবে একই এলাকায় কয়েকটি বোট চলে গেছে, অন্য এলাকা ফাঁকা! তাছাড়া বোটগুলো যদি ম্যাপিং করে চারপাশে পাঠানো হয়, তাতে তেল বাঁচবে, কাজটাও প্রপারলি হবে। সেজন্যই উদ্ধারের আগে এলাকা ম্যাপিং দরকারি বিষয়।’
চার নম্বর বার্তায় চমক জানালেন, উদ্ধার কাজে যাওয়া সদস্যদের নিয়ে। তার মতে, ‘যারা এই কাজটিতে অভিজ্ঞ শুধু তারাই বোট নিয়ে যাবেন। যারা আগে করেননি তারা বোটে চেপে উদ্ধারে না গিয়ে স্থলভাগে ত্রাণ বিতরণে কিংবা ম্যাপিংয়ে নিয়োজিত থাকাটাই উত্তম। কারণ এখন উদ্ধারের পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।’
এরপর শোনালেন আশার কথা। চমকের ভাষ্যে, ‘অনেকেই মনে করছেন কিংবা খবর ছড়ানো হচ্ছে ফেনী একটা ডেথ সিটি কিংবা মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে; একদমই মিথ্যা কথা। এখানে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। শহরটা প্রায় ডুবে গেছে। অনেকে বাইরে থেকে যোগাযোগ করতে পারছেন না চার্জের অভাবে ফোন বন্ধ বলে। এর বাইরে এই শহর এবং মানুষগুলো মোটামুটি কনট্রোলের মধ্যেই আছে। মোবাইলে পাচ্ছেন না বলে অনেকে আতঙ্কিত আছেন। আমি বলছি, আতঙ্কের কিছু নেই। এখানে যথেষ্ট পরিমাণে ভলান্টিয়ার আছে। সবাই জীবন দিয়ে চেষ্টা করছেন। শুধু খাবার আর বিশুদ্ধ পানির অভাব আছে। সেটা নিয়ে আসতে পারেন। আর আমার পরামর্শ, উদ্ধারের জন্য ফেনী না এসে খাগড়াছড়ি কিংবা কুমিল্লার দিকে গেলে আরও ভালো হবে।’
সবশেষে চমৎকার একটি কথা বললেন চমক। তার কথায়, ‘অনেকেই বলছেন বা বলবেন সেলিব্রেটিরা এসব স্থানে কেন যাচ্ছেন, দেখানোর জন্য যাচ্ছেন ইত্যাদি। ট্রাস্ট মি, এভাবে বলবেন না। এই অবস্থায় কেউ যদি দেখানোর জন্যেও যায় যাক না। সেলিব্রেটিরা কেউ আসলে, তাকে দেখে আরও দশটা মানুষ যদি ইনফ্লুয়েন্স হয় হোক না। এই সময়টাকে আমরা সবাই মিলে আসলে মোকাবিলা করতে হবে।’
বলা দরকার, গেল বৃহস্পতিবার বিকালে লাইফ জ্যাকেট ও ত্রাণ নিয়ে ট্রাক ভাড়া করে ঢাকা থেকে ফেনী ছুটে যান রুকাইয়া জাহান চমক ও তার দল।