কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডিবি ও সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এক প্রতারক চক্র। এই ঘটনায় মূলহোতাসহ সাতজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন, কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার সুবর্ণপুর এলাকার সৈয়দ আব্দুর রউফের ছেলে সৈয়দ আয়াত উল্লাহ (৩৭), বালুতুপা গ্রামের মো. ইসহাক মিয়ার ছেলে ইমরান হোসেন (৪০), একই এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. কবির হোসেন (২৮), বরুড়া উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মো. আব্দুল মালেকের ছেলে মো. মোজাম্মেল হক (৩৬), গালিমপুর গ্রামের মো. আলী আজগরের ছেলে মো. আব্দুর রহিম, চান্দিনা উপজেলার কেশরা গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের মেয়ে তাসনুবা আক্তার (২৩) ও লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা গ্রামের মো. মোস্তফা কামালের ছেলে মো. সাখাওয়াত হোসেন (২৮)।
শনিবার (৪ মে) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান। পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, স্থানীয় একটি প্রতারক চক্র টার্গেট করে ভিকটিম বরুড়া উপজেলার বড় বিজরা গ্রামের আবদুল মুমিন। একপর্যায়ে চক্রের সদস্য তরুণী তাসনুবার মাধ্যমে ভিকটিমকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়। পরে তাসনুবা ও প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য মোজাম্মেল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভনে ভিকটিমকে নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে গিয়ে প্রতারক তাসনুবার অশ্লীল ও অনৈতিক কাজের ভিডিও চিত্র ধারণ করে। পরে ধারণকৃত ভিডিও চিত্রের ভয় দেখিয়ে তারা ভিকটিমের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।
পরে ডিবি পরিচয়ে আগমন ঘটে প্রতারণা চক্রের অপর দুই সদস্য আয়াত উল্লাহ ও আব্দুর রহিমের। তাদের সঙ্গে থাকে ইমরান হোসেন ও কবীর হোসেন। ভিকটিমকে থানায় মামলা দেওয়ার ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হাতিয়ে নেওয়া হয় ভিকটিমের কাছে থাকা নগদ ৩০ হাজার টাকা। গ্রহণ করা হয় চক্রের দেওয়া ৭টি খালি স্ট্যাম্পে ভিকটিমের স্বাক্ষর। এতেও চক্রটি ক্ষান্ত না হয়ে ভিকটিমকে মামলায় জড়ানো ও প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত ৭টি চেক ও নগদ ২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। পরবর্তীতে আরও ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দেওয়ার শর্তে ভিকটিমকে ছেড়ে দেয়। এখানেই শেষ নয়। চক্রের আরেক সদস্য, মোজাম্মেল হক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শুরু করে ভিকটিমকে নতুন করে ব্ল্যাকমেইল। ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে ভিকটিমের অনৈতিক ভিডিও দিয়ে তৈরি করা হয় ‘কাল সময়’ নামক একটি মিডিয়ার নাম বলে নিউজ।
নিউজটি ভিকটিমের ছেলের মোবাইলে প্রেরণ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। ভিকটিমের ছেলে বাবার সম্মানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিমানে প্রতারক চক্রকে নগদ টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে সর্বমোট ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করে। এই ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করে। পরে, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে শনিবার রাত দেড়টায় সৈয়দ আয়াত উল্লাহকে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় টাউন হলের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে।
পরে, গ্রেপ্তারকৃত আসামির দেওয়া তথ্য মতে আসামি ভুয়া সাংবাদিক মোজাম্মেল হক (৩৬) ও মো. আবদুর রহিম (৪২), মো. শাখাওয়াত হোসেন (২৮), ইমরান হোসেনকে (৪০) ও কবির হোসেন (২৮) ও একমাত্র নারী সদস্য তাসনুবা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অলিখিত ৭টি স্ট্যাম্প, ভিকটিমের স্বাক্ষরিত ৭টি চেক, চাঁদাবাজির নগদ ২৪ হাজার টাকা ও অপরাধে ব্যবহৃত ১টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মংনেথোয়াই মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) নাজমুল হাসান রাফি, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রাজেশ বড়ুয়া প্রমুখ।