ময়মনসিংহ শহরের ব্যস্ততম এলাকা চরপাড়া মোড়। এ মোড়েই রয়েছে ‘টাইমস স্কয়ার’। ২০১৬ সালে স্থাপনাটি করে সিটি করপোরেশন। স্থাপনাটির চূড়ায় গোল মানচিত্র ও তার কাছাকাছি ঘড়ি। যদিও বিকল হয়ে যাওয়ায় ঘড়িটি এখন নেই। নান্দানিক এ স্থাপনাটি রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন পোস্টারে আড়াল করে রাখা হয়েছে। দূর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি টাইমস স্কয়ার। এমনই অবস্থা এই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে নির্মিত দৃষ্টনন্দন বেশির ভাগ স্থাপনার।
নগরীর ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকটি স্থাপনা ব্যানার-পোস্টারমুক্ত থাকলেও বাকিগুলো আড়াল হয়ে আছে রাজনৈতিক ও বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যানার-পোস্টারে। যদিও দৃষ্টিনন্দন চত্বর ও স্থাপনাগুলোয় ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানো নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত জরুরি বিজ্ঞপ্তি সাঁটিয়ে রেখেছে সিটি করপোরেশন। যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার না সরালে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও রয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। কিন্তু তা তোয়াক্কা করছেন না কেউ। এ বিষয়েও সিটি করপোরেশনও নীরব। বিষয়টি নগরে আনা হলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘পোস্টার অপসারণে আমাদের পদক্ষেপ চলমান থাকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় বিভিন্ন সময় পোস্টারগুলো লাগানো হয়েছে। যেখানে এখনো পোস্টার রয়ে গেছে, সেগুলো দ্রুত অপসারণ করা হবে।’
খোঁজ নিয়ে নিয়ে জানা যায়, সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়ে শহরকে নান্দনিক রূপ দিতে বিভিন্ন সময় স্থাপনাগুলো নির্মাণ করে। শুধু সৌন্দর্যবর্ধন নয়, স্থাপনাগুলো ভিন্ন ভিন্ন বার্তা বহন করে। কোনোটি শিক্ষার নগরী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়, কোনোটি সময়ের সঙ্গে চলতে উদ্বুদ্ধ করে, আবার কোনোটি বাংলার ইতিহাস, মুক্ত পায়রার মতো আকাশে ওড়া, বর্ণমালা, আলোকবর্তিকা ইত্যাদি। কিন্তু পোস্টারের আড়ালে ঢাকা পড়েছে এসব স্থাপনা।
নগরীর আকুয়া এলাকার বাসিন্দা সাদিয়া জামান বলেন, নগরীর সৌন্দর্য বাড়াতে বা সমাজকে ইতিবাচক বার্তা দিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো স্থাপনা সৌন্দর্য বাড়ানোর চেয়ে এখন দৃষ্টিকটু লাগে। যে বার্তা দিয়ে তৈরি হয়েছিল, এসব স্থাপনা পোস্টারের আড়ালেই তা থেকে যাচ্ছে। তাই এসব পোস্টার অপসারণই নয়, দরকার যথাযথ আইন কার্যকর করা।
নগরীর ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড মোড়ের ময়মনসিংহ মহিলা ডিগ্রি কলেজের সামনে ‘আলোকিত বাংলা’ চত্বর। ২০১৮ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। বাঙালির গৌরবময় ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য সময়কালকে স্মরণ করিয়ে দেয় চত্বরটি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৮ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ–অভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা লাভের বার্তা রয়েছে ‘আলোকিত বাংলা’ চত্বরে। বিভিন্ন বইয়ের আদলে তৈরি স্থাপনাটি দেখে এখন বোঝার উপায় নেই। বাঁশ পুঁতে চারদিকে সাঁটানো হয়েছে রাজনৈতিক প্যানা-পোস্টার।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর নতুন বাজার মোড় পায়রা চত্বরেও সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। একই দশা জিলা স্কুল মোড়ে রয়েছে ‘বর্ণমালা’ চত্বরের। এ চত্বরটির আশপাশেও রয়েছে ব্যানার-পোস্টার। চত্বরটি ঘিরে তারের জঞ্জালও। অবশ্য ‘শিক্ষার শেকড়’ নামে একটি চত্বর রয়েছে জিলা স্কুল মোড় এলাকাতেই। বই, কলম, কালির বোতল ও মোমবাতির আদলে স্থাপিত এ স্থাপনায় পোস্টার পাওয়া যায়নি। নগরীর টাউন হল মোড়ের ‘স্তম্ভিত সঙ্গীত’ চত্বরে পোস্টার না থাকলেও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও কাজী নজরুল ইসলামের ছবি দিয়ে তৈরি একটি স্কয়ার ঘিরেও রয়েছে পোস্টার। নগরীর কাঁচিঝুলি মোড় ‘আলোকবর্তিকা’ চত্বরে কোনো পোস্টার না থাকলেও সার্কিট হাউস মাঠের কোণে ‘ব্যাট-বল’ চত্বরে পোস্টার সাঁটানো রয়েছে।
নগরীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে ‘জিরো পয়েন্টের’ চত্বরের আশপাশেও পোস্টার দেখা যায়। সিটি করপোরেশনের প্রবেশমুখের ‘আল্লাহ’ চত্বরে পোস্টার না থাকলেও বড় মসজিদ চত্বরের ‘ইকরা’ স্থাপনাতেও ব্যানার স্থাপন করা রয়েছে। নগরীর মহারাজা রোডের মুখে মানুষের পরিপূর্ণ জীবন গড়তে করণীয় উল্লেখ করে ‘তিন সত্য’ স্কয়ার পাশেও ব্যানার সাঁটানো। তবে নগরীর রেলির মোড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করে ‘বিজয় মোড়’ পোস্টারবিহীন পাওয়া যায়।বিষয়টি নিয়ি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগ ময়মনসিংহের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বলেন, সৌন্দর্য যদি কারও মনে না থাকে, তাহলে বাইরে থেকে চাপিয়ে তার সৌন্দর্যবোধ জাগ্রত করা যাবে না।