Skip to content

‘পিপির বক্তব্য রাজনৈতিক’ মন্তব্য করে মার খেলেন আমুর আইনজীবী

    ‘পিপির বক্তব্য রাজনৈতিক’ মন্তব্য করে মার খেলেন আমুর আইনজীবীprothomasha.com

    ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড শুনানিতে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন মর্মে মন্তব্য করায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর আইনজীবীকে আদালত থেকে মারধর করে বের করে দিয়েছে আইনজীবীরা।

    আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় আমুর ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানিকালে এই ঘটনা ঘটে।

    এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।শুনানিকালে তদন্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানিতে আমুর অপকর্মের বিষয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দেন।

    শুনানিতে ফারুকী বলেন, আমির হোসেন আমু ১৪ দলের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক। তিনি কখনো চিন্তা করেননি হেলমেট পড়ে, হাতে হাতকড়া লাগিয়ে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ক্ষমতায় থাকার আমরণ ট্যাবলেট খেয়েছিলেন বলে মনে করতেন। কিন্তু বিধাতা তা মানেননি। তিনি সবকিছু ঠিক করে দেন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবকে বুঝিয়ে বাকশাল কায়েম করেন। দল থেকে সিরাজুল ইসলাম, আ স ম রবদের বের করতে আমু-তোফায়েলের ভূমিকা ছিল। তাদের কারণে স্বাধীনতার পর দেশে জনগণের মধ্যে বিভাজন বিরাজ করে।

    তারা শেখ মুজিবকে স্বৈরাচার করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল। এক দলীয় বাকশাল কায়েমের মূল হোতা আমু-তোফায়েল। বাংলার বাণী পত্রিকা ছাড়া আর কোনো পত্রিকা বের হতো না। জাসদ রাজনীতি করতে না পেরে অভ্যন্তরে চলে যায়। সিরাজ শিকদার বাম রাজনীতি করতো। তাকে হত্যা করা হয়। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয়। এরপর কি ঘটে সব জানেন। তবুও ষড়যন্ত্র থেমে নেই, বলেন এই আইনজীবী।

    তিনি আরও বলেন, ১৯৯১, ৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালে ক্ষমতার একটা পালাবদল চলে আসছিল। এরপর কি এমন হলে ১৫ বছর ভোটবিহীন থাকতে হবে। বাপকে যেভাবে বিপথে নিয়েছে, মেয়েটাকেও সেভাবে নিয়েছে আমু-তোফায়েলরা। হাসিনাকে বুঝাতো, ততদিন বেঁচে থাকবেন ক্ষমতায় থাকবেন। ফ্যাসিস্ট তৈরিতে তাদের ভূমিকা রয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার লোক খুন, গুম হয়েছে। অনেকে দেশে থাকতে না পেরে মালয়েশিয়াসহ ইউরোপে চলে গেছে। দেশের স্বাধীনতা অন্যের কাছে বিকিয়ে দিয়েছে। দেশের রাজনীতি নষ্ট করার কৌশলীদের একজন আমু।

    ফারুকী বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় তারা গণভবনে মিটিং করে। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনের গাজায় যেভাবে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়, আন্দোলনকারীদের ওপরও এভাবে গুলি চালায়। গত ৫ আগস্ট এর পর তার এলাকা ঝালকাঠিতে নিপীড়িত জনতা তার অত্যাচারের ইতিহাস তুলে ধরেছে। নিপীড়িত মানুষ তার বাড়িতে আগুন দেয়। সেখানে ৫ কোটি টাকা পাওয়া যায়। টাকার জাজিম বানিয়ে ঘুমাতেন। যেখানে যেতেন স্বর্ণের নৌকা ছাড়া উপহার নিতেন না। দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন। তার সহযোগীরাও পালিয়ে আছেন। হয়তো আস্তে আস্তে বের হয়ে আসবেন। এদের শাস্তি হোক। তাহলে আর ফ্যাসিস্টের জন্ম হবে না।

    রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেখ হওয়ার পর আমুর পক্ষে আইনজীবী স্বপন রায় চৌধুরী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘পিপি সাহেবের বক্তব্যে আমি আনন্দিত। তবে এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক মঞ্চে দিলে ভালো হতো। তার এ বক্তব্যে ক্ষুদ্ধ হন বিএনপির আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের অপর প্রসিকিউটরা। তারা তাকে ডায়াসের সামনে থেকে টেনেহেঁচড়ে আদালতের বাইরে নিয়ে যান। বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই আইনজীবী দরজার সামনে পড়ে যান। তখন তাকে লাথি মারা হয়। এরপর কয়েকজন আইনজীবী তাকে তুলে আদালত থেকে বের করে দেন। ‘

    এ সময় আদালতের মধ্যে কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যায়। পরিবেশ শান্ত হলেন আমুর পক্ষে অন্য আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। এরপর আদালত আমুর বক্তব্য শুনতে চান।

    আমু আদালতে বলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী। আমি ঢাকা বারের সদস্য, হাইকোর্ট বারের সদস্য। এখানকার পরিবেশ দেখে দু:খিত। এই পরিবেশে কিছু বলা উচিত না। মামলা চলবে, ভবিষ্যতে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করব। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অনেক কথা বলেছেন। আমি একজন রাজনিতিবিদ। রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে গেলে দুই ঘণ্টা লেগে যাবে। আমরা একে অপরের ভাই ভাই। মিলে-মিশে থাকা উচিত। আমরা এক সাথে থাকব। কেন দ্বন্দ্বে জড়াব? আশা করছি, এ পরিবেশ থাকবে না।’

    তখন বিএনপির আইনজীবীরা চিৎকার শুরু করেন। তারা বলেন, তিনি (আমু) ভয় দেখাচ্ছেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষের পিপি আইনজীবীদের শান্ত করেন। এরপর আমু বলেন, ‘আমরা যার যার পক্ষ অবলম্বন করব। নিজেরা নিজেরা কেন দ্বন্দ্বে জড়াব। ’

    এরপর পিপি ফারুকী বলেন, যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন তখন কি খবর নিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা বারের। আইনজীবীরা তো ভালোই ছিল। কিন্তু নির্বাচনের সময় সীল মেরে ভোট নিয়ে গেছে, আইনজীবীদের মারধর করেছে। তখন তিনি কি ভূমিকা নিয়েছিলেন।

    জবাবে আমু বলেন,‘প্রথমবার যখন গোলমাল হয় আমি এর বিরোধীতা করি। ভোট দিতে আসিনি, বয়কট করেছি। ’ এরপর আদালত ৬ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।