রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ বাদে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের সকলের এবং সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ দাবি করেছিলেন রাবির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এই দাবি করেন তারা। দাবি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সবাই পদত্যাগ করলেও এখনো পদত্যাগের ঘোষণা দেননি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যদের কেউ। তবে হল প্রশাসনের অধিকাংশরাই ২-৩ দিনের মধ্যে পদত্যাগ করতে পারেন বলে জানা গেছে।পদত্যাগের বিষয়ে সিনেট সদস্যরা বলছেন, ‘দীর্ঘদিন সিনেট অকর্যকর রয়েছে। তারা সিনেটের সদস্য আছেন কিনা জানেন না। তাদের পদত্যাগ করা, আর না করা সমান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে নতুন সিন্ডিকেট নির্বাচন করতে পারেন। তাদের পদত্যাগের কিছু নেই।’পদত্যাগের বিষয়ে কি ভাবছেন জানতে চাইলে শিক্ষক নির্বাচিত সিনেট সদস্য ও আইন বিভাগের অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি শিক্ষকদের মাধ্যমে সিনেটের একজন সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলাম, এটা জানি। কিন্তু কখনো সিনেটের কোনো সভা হয়নি, আমাকে কখনো ডাকা হয়নি। এটা আদৌ কার্যকর আছে কিনা আমি জানি না। তাই, যেখানে আমি দায়িত্ব পায়ইনি, সেখানে পদত্যাগ করা আর না করাতো সমান। আর পদত্যাগ কার কাছে বা, কিভাবে করব, সেটাওতো জানি না।’তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই মুহুর্তে প্রশ্ন তোলা উচিত যে, সিনেটের কোনো সভা কেনো হয়নি? কেনো এটা কার্যকর করা হলো না? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী, সিনেট প্রতিনিধিরা ভোটাভুটির মাধ্যমে তিনজন শিক্ষককে বাছাই করে দিবেন। তাদের ভিতর থেকে আচার্য ১ জনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিবেন। এটাই স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে সিনেটকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে ১৯৯৬ সাল থেকে। রাকসু নির্বাচন হয় না। সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নেই। সিনেট কার্যকর করার জন্য শিক্ষার্থীদের সোচ্চার হওয়া দরকার।’শিক্ষাবিদ হিসেবে আচার্য মনোনীত ৫ জন সিনেট সদস্যের একজন হলেন নওগাঁ জেলার বাসিন্দা অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম খান। তিনি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হমিদ খানের সময়ে মনোনীত হয়েছিলেন।আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী পদত্যাগ করবেন কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমার থাকা না থাকার কোনো অর্থই নেই। আমার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কারও কোনো যোগাযোগ নেই। ১০ বছর আগে আমাকে সদস্য করা হয়েছিল। আমি এখন সদস্য হিসেবে আছি কিনা, সেটাও জানি না। সিনেটের সভা হয় কিনা, সেটাও জানি না। ড. মিজানুর রহমান উপাচার্য থাকার সময় একবার ডেকেছিল। এখন কে কে সদস্য হিসেবে আছেন এবং এতোদিন সিনেটের কোনো সভা কেনো হয়নি, সেটাও আমি জানি না।’পদত্যাগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের নির্বাচিত সদস্য ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাহমুদুল হক বলেন, ‘আমরা সিন্ডিকেট সদস্যরাতো সরাসরি শিক্ষকদের ভোটে নির্বাচিত। সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা আমাদের পদত্যাগ চাইলে, চাইতে পারেন। আমরা তখন ভেবে দেখতে পারি বিষয়টা। কিন্তু ছাত্ররা আমাদের পদত্যাগ দাবি কেনো করছেন আমি জানি না আসলে।’সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হাসান আহমদ বলেন, ‘সিন্ডিকেট সদস্য বিষয়টাতো আসলে কোনো পদ না। আমাদের কোনো আলাদা অফিস নেই। নির্বাচনের মাধ্যমে জিতে সিন্ডিকেট সদস্য হওয়া লাগে। আমরাতো কোথাও যোগদান করিনি যে আমরা পদত্যাগ করব। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি মনে করে যে, তারা নতুন সিন্ডিকেট নির্বাচন করবেন, তাহলে তারা করতে পারেন। এটাতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যাপার। আমাদের কোনো সমস্যা নাই।’সিনেটে সরকার, রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, সিন্ডিকেট, শিক্ষা পরিষদ দ্বারা মনোনীত সদস্য এবং শিক্ষকদের দ্বারা নির্বাচিত সদস্য রয়েছে। আবার সিন্ডিকেট সদস্যরাও শিক্ষকদের দ্বারা নির্বাচিত। এই অবস্থায় তাদের কারও পদত্যাগ শিক্ষার্থীরা দাবি করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে রাবির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও আইন বিভাগের ছাত্র মাসুদ রানা বলেন, ‘এর আগে টোটাল সিস্টেমটাই ছিল কোরাপ্টেড। সেখানে সুবিচার বা, ন্যায়বিচারের কোনো সম্ভাবনায় ছিলো না। এটার প্রত্যেকটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিল ফ্যাসিজম। তাই, আমরা এই টোটাল সিস্টেমটাকেই আবার ঢেলে সাজাতে চাই। এ জন্যই সবার পদত্যাগ চাই আমরা।’এখনো সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যদের কেউ পদত্যাগ করেননি। এই অবস্থায় পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে রাবির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী মিশু বলেন, ‘আমরা অবৈধ বা, দলীয়ভাবে মনোয়নপ্রাপ্ত সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করেছি। ওনারা এখন পদত্যাগ না করলে, যখন বৈধ সিনেট ও সিন্ডিকেট হবে, তখন তার আগের প্রক্রিয়া হিসেবে আমরা তাদের রাজাকার- আলবদরের দোষর হিসেবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করব।’