ঝিঙে, টমেটো, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, ডাঁটাশাক, লাউ, শিম, করলা, মরিচ, বেগুন, পুঁইশাক—সবই আছে জাহানারা পারভিনের (৫২) সবজিবাগানে। এসব সবজির বিশেষত্ব হলো এগুলো বিষমুক্ত, প্রয়োগ করা হয় না কোনো কীটনাশক। জৈব সার ব্যবহার করেই ফলানো হয় এসব সবজি। বাড়ির পাশের পতিত পাঁচ শতাংশ জমিতে ফলানো এসব সবজিতে আট সদস্যের পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বাজারে বিক্রিও করা হচ্ছে। জেলা সদরের খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের মাঝাডাঙ্গা গ্রামে জাহানারা পারভিনের বাড়ি। কথা বলে জানা যায়, বিষমুক্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজির পাশাপাশি তিনি পুকুরে চাষ করছেন বিষমুক্ত মাছ। এ ছাড়া আছে হাঁস, মুরগি, লেবুবাগান ও সারি সারি কলাগাছ। তিনি পতিত জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন।
ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শুধু জাহানারা পারভিন একা নন, গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এমন সবজিবাগান দেখা যায়। অনেকে পতিত জমি ছাড়াও ঝুলন্ত সবজিবাগান, বস্তায় আদা ও সবজির চাষ করছেন। বস্তায় আদা ও সবজি চাষের কারণ হিসেবে তাঁরা জানান অতিবৃষ্টিতে পানি জমে যাতে ফসলের ক্ষতি না হয়, সে কারণে বস্তায় এসব চাষ করা হচ্ছে। গ্রামের জবেদা বেগম (৩৮), কুলসুম বেগম (৪০), হাসিনা বানুসহ (৩৮) অনেকে বস্তায় আদা চাষ, ঝুলন্ত সবজিবাগান ও পতিত জমিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে পরিবারের পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি বাড়তি আয় করছেন। তাঁদের এ কাজকে সহজ করেছে জয়েন্ট অ্যাকশন ফর নিউট্রিশন আউটকাম (জানো) নামের একটি প্রকল্প।
এ বিষয়ে কথা হয় একই গ্রামের মর্জিনা বেগমের (৪০) সঙ্গে। তাঁর স্বামী গ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেন। আর তিনি বাড়ির পাশের পতিত জমিতে এসব চাষাবাদ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পর বাজারে বিক্রি করেন। তাতে তাঁদের সংসারে সচ্ছলতা আসছে। এসব কাজের পাশাপাশি তিনি বাড়িতে সেলাইয়ের কাজও করেন।
এ বিষয়ে কথা বললে জানো প্রকল্পের সদর উপজেলা ব্যবস্থাপক মো. শরীফ আহমেদ জানান, ‘নীলফামারী জেলা সদরের বিভিন্ন গ্রামে আমরা উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। আমরা তাঁদের বিষমুক্ত সবজি চাষ, পশু পালন, মৎস্য চাষ, সেলাই প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করি। এরপর এসিআই কোম্পানির বীজ, মেঘা ফিড, ভ্যাকসিন, পশুখাদ্য ব্যবহারে তাঁদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দিই। এখন তাঁরা তাঁদের প্রশিক্ষণের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে কম মূল্যে বীজ, ভ্যাকসিন ও ফিড ব্যবহার করে ভালো ফল পাচ্ছেন।’