আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আজ শুক্রবার জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের শোভাযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে।দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে এ শোভাযাত্রা করতে গেলে পুলিশ মহিলা দলের নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়। এতে শোভাযাত্রা না করেই কর্মসূচি শেষ হয়।শোভাযাত্রার আগে মহিলা দলের পক্ষ থেকে পুলিশকে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছিল, তারা শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা করবে। এ ছাড়া নারী দিবসের এ কর্মসূচিতে ঘটনাস্থলে থাকা নারী পুলিশ সদস্যদেরও পাশে থাকার আহ্বান জানায় তারা। তবে কর্মসূচিতে আসা নেতা-কর্মীরা বলেন, পুলিশ শোভাযাত্রার অনুমতি দিচ্ছে না। তারা ভয় পায়।শোভাযাত্রার আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী দিবসকে কেন্দ্র করে সমাবেশ শুরু হয়।সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল চিন্তা, নারীর ক্ষমতায়নে রাষ্ট্র ও সমাজকে বিনিয়োগ করতে হবে। এই বিনিয়োগ নারীর কথা বলা, পেশা ও কাজের স্বাধীনতা—সব ক্ষেত্রে।
দেশ এখন ‘ধর্ষণের দেশে’ পরিণত হয়েছে দাবি করে আমীর খসরু বলেন, এমন কোনো দিন, সপ্তাহ, মাস কিংবা বছর নেই যে নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন না। এই ধর্ষণ হচ্ছে দোষীদের বিচার না করার কারণে। বিচার না হওয়ার কারণ ক্ষমতাবানেরা এসব ঘটনায় জড়িত। তাদের (আওয়ামী লীগ) অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত। ধর্ষণের ঘটনায় নারীবাদীরাও সোচ্চার হচ্ছেন না। তাঁরাও ভয়-ভীতির পরিবেশে আছেন।দেশে বর্তমানে দখলের রাজনীতি চলছে বলে অভিযোগ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, গতকাল হাইকোর্ট দখলের প্রক্রিয়া দেখেছেন। জনগণের ভোট তো আগেই দখল হয়ে গেছে। এখন আইনজীবী ও ব্যবসায়ী—তাঁদের ভোটও দখল করতে চায় (ক্ষমতাসীনেরা)।
নারীদের আগামী দিনে ক্ষমতায়ন করতে চাইলে আগে জনগণের ক্ষমতায়ন করতে হবে বলে মনে করেন বিএনপির নেতা আমীর খসরু। তিনি বলেন, জনগণের ক্ষমতায়ন করা না গেলে, ভোটাধিকার ফেরানো না গেলে, কারও ক্ষমতায়নের সুযোগ থাকবে না। নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে না আনা গেলে দেশ যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে ফিরে আসার সুযোগ নেই। নাগরিক অধিকার ফিরে পেলে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা যাবে।সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী সব জায়গায় জিয়াউর রহমানের সময় নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যাঁর যাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি নারীদের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে নারীদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু বর্তমানে নারীদের ঘরে-বাইরে ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে উল্লেখ করে আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘আজ এমন অবস্থায় আছি যে নারীদের ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্যও দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়, শিক্ষকের কাছে ধর্ষণের শিকার হয় ছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।’ নারী দিবসে নারীদের প্রতিজ্ঞা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিজ্ঞা করি, আমরা নারী, আমরাই পারি। এ দেশে কোনো ধর্ষণ যাতে আর না হয়। প্রত্যেক নারী যেন নিরাপদে থাকতে পারেন দেশ ও সমাজে।’
সমাবেশে মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান বলেন, এ দেশে যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হয়, তাহলে বিরোধী পক্ষ ১০টি আসনও পায় কি না সন্দেহ। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি করেন।সমাবেশে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সহসভাপতি নেওয়াজ হালিমা আরলি, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক নায়েবা ইউসুফ, দক্ষিণের আহ্বায়ক রুমা আক্তার প্রমুখ বক্তব্য দেন।