শুল্কায়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় কমেছে খেজুর আমদানি। গত বছরের তুলনায় এ বছর আমদানি হয়েছে অর্ধেকের চেয়েও কম।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের তথ্যমতে, গত সাড়ে তিন মাসে দেশে মাত্র ১০ হাজার ৮০ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। যা গত বছর এ সময়ের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গণহারের পরিবর্তে মানভেদে ১ থেকে ৪ ডলারে শুল্কায়ন পদ্ধতি চালু হওয়ায় এ বছর আমদানি কমেছে।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তৌহিদুল আলম বলেন, সাধারণত রমজানে ইফতারের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ খেজুর আমদানির ওপর নির্ভরশীল। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শুল্কহার বেড়েছে। ফলে উৎসাহ হারিয়েছেন আমদানিকারকরা। গতবছরের তুলনায় এবার প্রায় অর্ধেক খেজুর আমদানি হয়েছে। এছাড়া অধিক শুল্কহারে যেসব খেজুর আমদানি হয়েছে তার দাম এবার চড়া।
মঙ্গলবার সকালে অন্যতম ফলের আড়ত স্টেশন রোডের ফলমন্ডি, খাতুনগঞ্জ ও রেয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রিমিয়াম মানের মাশরুক খেজুর প্রতি ৫ কেজির প্যাকেট ৭ হাজার ২০০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা, মেজদুল ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ এসব খেজুরের দাম ছিল ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। একেবারে সাধারণ মানের ১ হাজার ৮০০ টাকার সুগাই খেজুর ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ২ হাজার ৫০০ টাকার মাবরুম খেজুর ৩ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া মধ্যমানের মানের ২ হাজার ৭০০ টাকার মরিয়ম ৪ হাজার ৩০০ টাকা এবং ৩ হাজার ২০০ টাকার আজোয়া ৪ হাজার ২০০ টাকা। তাছাড়া একটু উন্নতমানের আজোয়া বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা।
ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে গত এক মাসের ব্যবধানে মানভেদে দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রোজার আগে খেজুর আমদানিতে কমমূল্য ঘোষণার অভিযোগ ওঠার পর এবছর মানভেদে শুল্কায়নমূল্য নির্ধারণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম আদেশ জারি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৯ নভেম্বর পাঁচ ক্যাটাগরিতে আবারও খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তৃতীয় দফায় গত মাসের ১৮ জানুয়ারি এক অফিস আদেশে শুকনো ও তাজা খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যা সাধারণ মানের খেজুরে ১ ডলার, মধ্যম মানের ২ ডলার থাকলেও প্রিমিয়াম মানের খেজুরে শুল্ক নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৪ মার্কিন ডলার।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের আমদানি পরিসংখ্যানে বলছে, আসন্ন রমজান সামনে রেখে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ হাজার ৮০ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, অন্যান্যবার ব্যবসায়ীরা খেজুর আমদানিতে নানাভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। এবার খেজুরের আমদানিতে তিন ক্যাটাগরিতে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যার যথাযথ শুল্কহার আদায় প্রক্রিয়া শেষ করে খালাস দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে শুল্কহার বেশি থাকায় এবং আমদানি কমাতেই খেজুরের দাম বাড়ছে বলে জানান খাতুনগঞ্জ ও স্টেশন রোডের ফলমন্ডির আড়তের ব্যবসায়ীরা।
ফলমন্ডির আরাফাত এন্টারপ্রাইজের মো. হায়দার বলেন, ‘খেজুর আমদানির জন্য শুল্কহারই গলার কাঁটা। কাস্টমস যদি শুল্কহার কমায় তাহলে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত আমদানি করতে পারবে। এতে খেজুরের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকবে।’
খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ব্যবসায়ী মো. জামশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘অন্যান্যবার খেজুর আমদানি করেছি। এবার শুল্কহার বাড়তির কারণে কোন খেজুর আমদানি করা হয়নি। কাস্টমসের চড়া শুল্কহার দিয়ে খেজুর আমদানি করতে হলে আড়ত পর্যায়ে বিক্রি হবে দ্বিগুণ দরে আর ক্রেতা পর্যায়ে হবে তিনগুণের চেয়ে বেশি।’