বিলাসবহুল ঘড়ি, দামি ব্র্যান্ডের ব্যাগ বা সানগ্লাস ব্যবহার বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেড়েছে। বিশের কাছাকাছি থেকে শুরু করে ত্রিশের এদিক ওদিক যাদের বয়স, তাদের মধ্যে এ প্রবণতা চোখে পড়ার মতো। এ প্রজন্ম জেনারেশন জেড বা জেন জেড এবং মিলানিয়াল হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে সর্বস্ব খরচ করে বিলাসবহুল পণ্য কেনার প্রবণতা বাড়ছে কেন, তা নিয়ে চলছে না গবেষণা। এ বিষয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ।
২৪ বছয় বয়সী নিয়া হল্যান্ড সম্প্রতি শ্যানেলের ভিনটেজ একটি ব্যাগ কেনার জন্য ব্যয় করেছেন আড়াই হাজার ডলার। এটি কিনতে তাঁর প্রায় সব সঞ্চয় ফুরিয়ে গেছে। এ অর্থ অন্য দরকারি কাজে খরচ করা যেত, সঞ্চয় করা বা কোথাও বিনিয়োগ করা যেত। এ সব তিনি জানতেন। সব জেনেবুঝেই তিনি এ অর্থ শ্যানেলে একটি ব্যাগ কেনার জন্য অর্থ ব্যয় করেছেন।
একটি ব্যাগের পেছনে সব সঞ্চয় ব্যয় করার জন্য নিয়ার কোনো অনুতাপ নেই। তিনি নিজেকে দায়িত্বজ্ঞানহীনও মনে করেন না। নিয়ার যুক্তি, নিজের বাড়ি কেনা বা সন্তান নেওয়ার মতো প্রথাগত কোনো পরিকল্পনা তাঁর নেই। কারণ এসব লক্ষ্য অর্জন তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই একটি দামি ব্যাগ কেনার মতো ‘সামান্য বিলাসীতা’ তিনি হাতছাড়া করতে চান না।
নিয়া জানান, অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা লেগেই আছে। এ অবস্থায় নিজের তাৎক্ষণিক চাওয়া পূরণের জন্য অর্থ ব্যয় অনেকটা সহজ বলে মনে করেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের এই পিএইচডি শিক্ষার্থী। তরুণদের এ ধরনের ব্যয় অর্থনীতির ভাষায় ডুম স্পেন্ডিং হিসেবে পরিচিত।
ডুম স্পেন্ডিং কী
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকলে মানুষ সাধারণত ব্যয়ের লাগাম টানে। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পাল্লা দিয়ে এর বিপরীত দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। তারা বুঝে গেছে, তাদের জন্য এক হতাশাজনক ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। কোনো অবস্থাতে তা বদলানো সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষা ঋণের চাপ, জীবনযাত্রার ব্যয় অব্যাহতভাবে বাড়ছে, বদলে যাচ্ছে শ্রম বাজার। এ অবস্থায় লক্ষ্য অর্জন দিনে দিনে কঠিন হয়ে উঠছে। তাই তরুণেরা অর্থ না জমিয়ে নিজেদের ইচ্ছাপূরণে ব্যয় করছে। সঞ্চয় বা বিনিয়োগে মনোযোগ দিচ্ছে। তরুণদের এ প্রবণতাই ডুম স্পেন্ডিং হিসেবে পরিচিত।
পরিসংখ্যান কী বলে
আর্থিক বিষয়সংশ্লিষ্ট জরিপ সংস্থা ক্রেডিট কার্মার সাম্প্রতিক তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৭ শতাংশ মানুষ ডুম স্পেন্ডিং করেন। তবে মিলেনিয়াল ও জেন জেডের মধ্যে ডুম স্পেন্ডিংয়ের হার আরও বেশি। মিলেনিয়াল বা ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, এমন মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে ডুম স্পেন্ডিংয়ের হার প্রায় ৪৩ শতাংশ। আর জেন জেড বা ১৯৯০ শেষ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে ডুম স্পেন্ডিংয়ের হার প্রায় ৩৫ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
ক্রেডিট কার্মার ভোক্তা আর্থিক পরামর্শক কোর্টনি আলেভ বলেন, ‘ডুম স্পেন্ডিং জীবনযাপনের স্বাস্থ্যকর কোনো পদ্ধতি নয়। তবে এটি এক ধরনের জীবনযাপন, তা আমাদের স্বীকার করতে হবে।’
নিউইয়র্কের ক্লিনটনের হ্যামিল্টন কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক স্টিফেন উ বলেন, ‘তরুণদের এ ধরনের ব্যয় চলমান অর্থনীতির গতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে এটি নতুন কিছু নয়। মানুষ যখন সব ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেয় এবং মনে করে তাদের আর্থিক সাফল্যের বিষয়টি তাদের হাতে নেই। তখন তারা সঞ্চয় করে না। ২০০৭ ও ২০০৯ সালের আর্থিক মন্দা ও করোনার কারণে মানুষের মধ্যে এ ধরনের ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়েছে।’
জেন জেডের জন্য কনটেন্ট তৈরি করেছেন মারিয়া মেলচর। টিকটক কনটেন্টে তিনি এ প্রজন্মের তরুণদের জন্য আর্থিক বিষয়ে পরামর্শ দেন। তিনি মনে করেন, ব্যয়বহুল জিনিস কেনা বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। কিন্তু কোনো তরুণ যখন সন্তানদের নিয়ে শহরতলীতে একটি বাসা কিনে থাকার পরিকল্পনা ছেড়ে দেয়, তখন তার জন্য তা বিভ্রান্তিকর কোনো বিষয় নয়। তাই জেন জেডের বিলাসবহুল পণ্যে মজে থাকার বিষয়কে ডুম স্পেন্ডিং বলতেও রাজি নন মারিয়া। তাঁর মতে, আসলে মানুষের স্বপ্নই বদলে গেছে।