জ্বালানি তেলের বাজারে নতুন চমক দেখাল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি রফতানিকারক দেশ হিসেবে সৌদির এই পদক্ষেপে জ্বালানির বাজারে আবার একধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। আর এতে বিপাকে পড়তে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী রাখতে গত বছর থেকে ব্যাপকভাবে তেলের উৎপাদন কমিয়েছে সৌদি আরব ও ওপেকের বিভিন্ন দেশ সদস্য। কথা ছিল, চলতি বছর তারা অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। এখানেই কারসাজি করছে সৌদি আরব। জানা গেছে, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা সৌদি আরবের ছিল তা ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। দেশটির সরকার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোকে দেওয়া এক নির্দেশে তেল উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি বাদ দেওয়ার কথা বলেছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে সৌদি আরামকোর দৈনিক উৎপাদন ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের তেল উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার কারণে জ্বালানির বাজারে ফের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ ) বলেছে, বিশ্বজুড়ে চলতি বছর তেলের চাহিদা কমবে। এর পেছেনে অন্যতম কারণ হচ্ছে- বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাওয়া। এছাড়াও চলতি দশকের মধ্যভাগে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠবে। সে কারণেও জ্বালানি তেলের চাহিদা আর তেমন একটা বাড়বে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে, সৌদি আরবের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপাকে পড়তে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কেননা, চলতি বছরের নভেম্বরে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সৌদির এই উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করায় বাইডেন ওই নির্বাচনী প্রচারণা বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারেন। কেননা, বাইডেন আশা করেছিলেন- সৌদি আরব তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করলে দাম কিছুটা কমবে।
পাশাপাশি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধসহ নানা ধরনের সংকট চলছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও জ্বালানি তেলের দাম এখন প্রতি ব্যারেল ৮১ ডলার, ২০২৩ সালের গড় দামের চেয়ে যা সামান্য কম। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের একের পর এক হামলার পরও জ্বালানি তেলের দাম খুব একটা বাড়ছে না। এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরব ও ওপেক জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। সৌদি আরব গত বছর দৈনিক গড়ে ৯০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। বিশ্বের মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ এটা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। তবে তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল। এর আগে দেশটির সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দাবি করেছিলেন, সৌদি আরব দিনে দুই কোটি ব্যারেল তেল উৎপাদন করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা বলেছেন, সৌদি আরবের উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে যে সমস্যা আছে, সেটা তারা বুঝতে শুরু করেছে। তারা আরও বলেছেন, এখন তাদের কৌশল নিয়ে বড় ধরনের চিন্তাভাবনা করতে হবে। এর ফলে আরামকোর পুঁজি ব্যয়ে এর বড় প্রভাব পড়বে, সেই সঙ্গে উপসাগরের সরবরাহব্যবস্থা এবং ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর তেলনীতিতেও তার প্রভাব অনুভূত হবে।