জয় শাহ আইসিসির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেওয়ার আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঘিরে বৈঠকে বসবে আইসিসি। এরপরও জয়ের কাছেই অনুরোধ করল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
আগামী রোববার (১ ডিসেম্বর) আইসিসির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেবেন জয় শাহ। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব এবার বসবেন বিশ্ব ক্রিকেটের মসনদে। এদিকে আগামী বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজন ঘিরে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পাকিস্তানেই হবে কিনা তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি আইসিসি।
আগামীকাল শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রয়েছে আইসিসির বৈঠক। সেখানেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সেই বৈঠকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তরফে উপস্থিত থাকবেন জয় শাহ। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পাকিস্তান বোর্ডও বুঝতে পারছে যে জয়ই আসল লোক। সে কারণে আগে থেকেই জয়ের কাছে আর্জি জানিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নকভি।
এর আগে ২০২৩ সালে এশিয়া কাপের আগেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তানে খেলতে যেতে চায়নি ভারত। সেই সময় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন শাহ। তার নেতৃত্বাধীন কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, হাইব্রিড মডেলে প্রতিযোগিতা হবে। ভারত তাদের সব ম্যাচ শ্রীলংকায় খেলে। বাকি ম্যাচগুলো হয় পাকিস্তানে। শ্রীলংকাতেই হয় ফাইনাল। হাইব্রিড মডেলে হলেও প্রতিযোগিতার আয়োজক দেশ শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানই ছিল। ফলে লাভের টাকা পেয়েছিল তারা।
১৯৯৬ সালের পর এই প্রথম আইসিসির কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজক পাকিস্তান। করাচি, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডির স্টেডিয়ামগুলোর সংস্কারের কাজ শুরু করেছে পিসিবি। বিপুল বিনিয়োগ করেছে তারা। এ পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতা না হলে ক্ষতি হবে পাকিস্তানের। মুখ পুড়বে তাদের। সেটা যাতে না হয় তার চেষ্টাই করছে পাকিস্তান।
পিসিবি চেয়ারম্যান নকভি অনুরোধ করেছেন, জয় শাহ যেন বিশ্ব ক্রিকেটের কথা ভাবেন। তিনি বলেন, ডিসেম্বরে জয় শাহ দায়িত্ব নেবেন। আমি নিশ্চিত বিসিসিআই থেকে আইসিসিতে যাওয়ার পর উনি আইসিসির লাভ নিয়ে ভাববেন। ওর সেটাই করা উচিত। যখন কেউ কোনো দায়িত্ব নেন, তখন তার উচিত সেই সংগঠনের লাভের কথা ভাবা। আমার অনুরোধ— উনি নতুন দায়িত্ব নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের কথা ভাবুন।
নকভি আরও বলেন, যদি পরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে কোনো সমস্যা হয় তা হলে শাহ সেই সমস্যা মেটানোর ক্ষমতা রাখেন। কারণ ভারতীয় বোর্ডের সচিব থাকাকালীনও আইসিসির বিভিন্ন সিদ্ধান্তে প্রভাব থাকত শাহের। তার ক্ষমতার কথা পাকিস্তানের জানা। সেই কারণে শাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিযোগিতা আয়োজনে সমস্যা হবে না বলে মনে করছে পাক বোর্ড। আশার আলো দেখছেন তারা। তাই আগে থেকেই অনুরোধ করেছেন নকভি।
পাক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি যাতে পাকিস্তানেই হয় তার আপ্রাণ চেষ্টা করব। আইসিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। আমরা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। গত বছর ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে আমরা গেছি। তা হলে ভারতের সমস্যা কীসের? ওদের এই দাবি মেনে নেওয়া যায় না। পাশাপাশি লিখিতভাবেও ওরা আমাদের কিছু জানায়নি।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হওয়ার কথা। কিন্তু ভারত প্রথম থেকেই জানিয়ে দিয়েছে, সেখানে খেলতে যাবে না তারা। ২০০৮ সালের পর থেকে পাকিস্তানে খেলতে যায়নি ভারত। তারা আইসিসিকে অনুরোধ করেছে অন্য কোনও দেশে খেলা সরাতে। না হলে অন্তত হাইব্রিড মডেলে খেলার আয়োজন করার অনুরোধ করেছে বিসিসিআই। তবে পাকিস্তান নিজেদের দাবিতে অনড়। আইসিসি সূত্রে খবর, হাইব্রিড মডেলে রাজি করানোর জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ পিসিবিকে প্রায় ৫৯১ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে। পাকিস্তানের ক্রিকেট কর্তাদের রাজি করানোই এখন মূল চ্যালেঞ্জ আইসিসি কর্মকর্তাদের। সেই বৈঠকের আগেই শাহের দরজায় পৌঁছে গেল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।