বিজ্ঞানী ও প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মনে করেন, পাঁচ-ছয় কোটি বছর আগে ডাইনোসররা কোনো গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে। গ্রহাণুর আক্রমণে পৃথিবীর প্রাণীদের অনেকেই হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ভবিষ্যতে এমন দুর্যোগ মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রাণীর কোষের নমুনা হিমায়িত করে চাঁদে পাঠাতে চান। প্রাণিকোষের বায়োরিপোজিটরি বা পুনরুৎপাদন করার জন্যই বিজ্ঞানীরা এমন এক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
নতুন এ পরিকল্পনায় প্রাণসমৃদ্ধ পৃথিবীর প্রাণীদের রক্ষা করার জন্য চাঁদে একটি লাইব্রেরির মতো বায়োরিপোজিটরি স্থাপনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। লাইব্রেরিতে যেমন বই থাকে, তেমনি সেই বায়োরিপোজিটরিতে স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে সরীসৃপ, পাখি ও উভচর প্রাণীর হিমায়িত কোষ বিশেষভাবে ক্রিওপ্রেসারড উপায়ে সংরক্ষণ করা হবে। পৃথিবীতে কোনো কারণে প্রাণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে সেই কোষ নতুন জীবন তৈরি করতে ক্লোনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তখন চাঁদ বা অন্য গ্রহে প্রাণীদের রাখা হতে পারে। এই ধারণা অবশ্য নতুন নয়। পৃথিবীতে নরওয়েতে একটি বীজভান্ডার রয়েছে। সেখানে ফসলের বিপর্যয়ের বীজ হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি মোকাবিলায় বীজ সংরক্ষণ করা হয়। এমনই এক সংরক্ষণাগার চাঁদে তৈরির পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ানের ন্যাশনাল জু অ্যান্ড কনজারভেশন বায়োলজি ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের প্রাণ সংরক্ষণের জন্য এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। বায়োসায়েন্স নামের একটি জার্নালে তারা এই বিশাল উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছেন। পৃথিবীতে বায়োরিপোজিটরি তৈরির খরচ অনুমান করা যায়, কিন্তু চাঁদে এই খরচ অনেক বেশি হবে। পৃথিবীর চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ব্যয় হবে।
বিজ্ঞানী মেরি হ্যাগেডর্ন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এই চন্দ্র বায়োরিপোজিটরি পৃথিবীর ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতির নমুনা রাখা হবে। কিন্তু আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হবে পৃথিবীর অধিকাংশ প্রজাতির প্রাণীকে সেখানে সংরক্ষণ করা। বিজ্ঞানীরা চাঁদের হিমশীতল মেরু অঞ্চলে বায়োরিপোজিটরি তৈরির প্রস্তাব করেছেন। সেখানে চাঁদে বিশাল গর্তে কোষ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। চাঁদের ছায়াযুক্ত অঞ্চলের তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ২৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। এই তাপমাত্রা কোষ সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ট ঠান্ডার চেয়ে বেশি।’