সদ্য শেষ হওয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটে ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই ম্যাচে অজানা এক কারণে টাইগার একাদশে ছিলেন না সহ-অধিনায়ক তাসকিন আহমেদ। সে সময় এটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠলেও সঠিক তথ্য জানা যায়নি। অবশেষে এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য সামনে এসেছে।
ক্রিকেট ভিত্তিক পোর্টাল ক্রিকবাজ গতকাল মঙ্গলবার বিসিবির এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ম্যাচের দিন দেরিতে ঘুম থেকে ওঠায় টিম বাস মিস করেন তাসকিন। পরে এই পেসারকে ছাড়াই একাদশ সাজাতে বাধ্য হয় টিম ম্যানেজমেন্ট! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা ক্রিকবাজকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাসকিন বিব্রতকর বিষয়টি নিয়ে সতীর্থদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান গতকাল কথা বলেছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ক্রিকেটে একটা নিয়ম আছে, দলের বাস কারও জন্য অপেক্ষা করে না। যদি কেউ কখনো বাস মিস করে, তারা পরে গাড়ি নিয়ে মাঠে আসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ট্রান্সপোর্টের সাপোর্টটা অনেক কঠিন ছিল। যখন তাসকিন পৌঁছে ছিল (মাঠে), টস হওয়ার ৫-১০ মিনিট আগে। স্বাভাবিকভাবে কঠিন ছিল ওই সময় তাকে দলে নেওয়া। তাসকিন পরে এর জন্য দলের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। দলের সবাইও বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। অনিচ্ছাকৃত ভুল সবারই হতে পারে। সেও এটা স্বীকার করেছে। তারপর ওখানেই এটা শেষ হয়ে গেছে।’এবার এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন খোদ তাসকিন। তিনি নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দীর্ঘ এক পোস্টে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে, এই ঘটনায় বেশিরভাগ সংবাদ এবং তথ্য যা ছড়ানো হচ্ছে তা কেবল গুজব।
তাসকিনের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমি সম্প্রতি অনলাইনে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে সম্প্রতি শেষ হওয়া টি-২০ বিশ্বকাপের একটি ঘটনা নিয়ে অনেক হৈচৈ করা হচ্ছে।প্রথমত, আমি সবাইকে জানাতে চাই যে বেশিরভাগ সংবাদ এবং তথ্য যা ছড়ানো হচ্ছে তা কেবল গুজব এবং আমি আশা করি ভক্তরা এটি সেইভাবে দেখবেন।দ্বিতীয়ত, আমি ঘটনাটি সেদিন আসলে কী ঘটেছিল তা পরিষ্কার করতে চাই।আমি স্বীকার করি যে আমি স্বাভাবিকের চেয়ে পরে উঠেছি এবং এর জন্য আমি ইতিমধ্যে পুরো দল এবং ম্যানেজমেন্টেরকাছে ক্ষমা চেয়েছি।
আমি সকাল ৮:৩৭ এ উঠেছিলাম এবং ৮:৪৩ এ লবিতে গিয়েছিলাম এবং আমার রাইড প্রস্তুত হওয়ার সাথে সাথে আমি সকাল ৯:০০ এ হোটেল ছেড়েছি। আমি সকাল ৯:৪০ এ স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছি, ম্যাচ টসের ২০ মিনিট আগে সকাল ১০:০০ এ। আমরা সকাল ১০:১৫ এ জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছিলাম এবং ম্যাচটি সকাল ১০:৩০ এ শুরু হয়েছিল।
এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে এই তথাকথিত ক্রীড়া সাংবাদিকরা গুজবের ভিত্তিতে খবর প্রচার/মুদ্রণ করছে এবং যাচাই না করে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে যা জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড় হিসাবে।
যারা আমাকে চেনেন তারা জানেন আমি আমাদের দেশকে কতটা ভালোবাসি এবং বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কতটা নিবেদিত, উৎসাহী এবং গর্বিত। আমি জানি আমি সময়মতো টিমের বাসে না উঠার একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল করেছি, কিন্তু আমি টসের আগেই স্টেডিয়ামে ছিলাম। আমার চূড়ান্ত দলে নির্বাচিত না হওয়াটা টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত ছিলো। যা সঠিক টিম কম্বিনেশন পাওয়ার সাথে সম্পর্কিত এবং এটি আমার টিম বাসে না ওঠার ব্যর্থতার সাথে সম্পর্কিত ছিল না।
তাই, আমি আশা করি মিডিয়া এবং ক্রীড়া সাংবাদিকরা মিথ্যা গল্প লেখার আগে আরও সতর্কতা অবলম্বন করবেন এবং একটি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করবেন না। এটি কেবল আমাদের খেলোয়াড়দের ক্ষতি করে না বরং আমাদের দেশের সামগ্রিক চিত্রকে ক্ষুণ্ন করে। আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই সৎ এবং পেশাদার সাংবাদিকতা আশা করি যাতে জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারি।ভবিষ্যতে, আমি আইনি ভাবে এই ধরনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো যাতে কেউ আমার ক্রীড়াবিদ বা মানুষ হিসাবে আমার সুনাম বা অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা না করে।আমার সকল ভক্তদের ধন্যবাদ তাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য।