গত চার দশকে গানের কথা আরও বেশি ক্ষুব্ধ এবং পুনরাবৃত্তিমূলক হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে। অস্ট্রিয়ার গবেষকেরা গানের কথা নিয়ে এ গবেষণা করেন। তাঁরা দাবি করেন, র্যাপ সংগীতে গত চার দশকে বেশি ক্ষোভ ও নেতিবাচক আবেগ বাড়তে দেখা গেছে। অন্যদিকে লোকসংগীতে এই হার সবচেয়ে কম।
গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্টিফিক রিপোর্টস সাময়িকীতে। এতে গবেষকেরা আরও বলেন, কিছু গানে ক্ষোভের প্রকাশ থাকলেও এখনকার রক, র্যাপ, লোকসংগীত, পপ, রিদম অ্যান্ড ব্লুজ (আরঅ্যান্ডডি) গানের কথা আরও সহজ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইভা জাঙ্গারলে বলেন, সংগীতে ক্ষোভ প্রকাশক শব্দগুলো আরও বেশি ব্যবহার হচ্ছে; কারণ সমাজ ও সংস্কৃতির সাধারণ পরিবর্তনকেই প্রতিফলিত করে সংগীত।
অধ্যাপক ইভা জাঙ্গারলে ও তাঁর সহকর্মীরা ১৯৮০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাজারে ছাড়া ইংরেজি ভাষার ১২ হাজার গান বিশ্লেষণ করেন। একই সঙ্গে তাঁরা সংগীতের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জিনিয়াসে বিভিন্ন গানের কথার দর্শকসংখ্যা তুলনা করেন। তাঁরা দেখেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গানের কথা আরও সহজ ও বোঝার মতো সাবলীল হয়েছে। এ ছাড়া গানে আরও বেশি আবেগ ও ব্যক্তিগত বিষয় যুক্ত হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গানের মধ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দের সংখ্যা কমে গেছে, বিশেষ করে র্যাপ ও রক গানের মধ্যে। অর্থাৎ গান এখন পুনরাবৃত্তিমূলক হয়ে উঠেছে। এর কারণ হিসেবে গবেষকদের অনুমান, সংগীত কীভাবে উপভোগ করা হয়, তার ধরন পাল্টে গেছে। যেমন অনেক গানের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে ব্যবহার বেড়ে যাওয়া।
অধ্যাপক ইভা জাঙ্গারলে আরও বলেন, ‘গত চার দশকে আমরা অনেক পরিবর্তন দেখেছি। দোকান থেকে রেকর্ড কিনে গান শোনার পরিবর্তে মুঠোফোনে থাকা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে লাখো গানের মধ্য থেকে বাছাই করে গান শুনতে পারে মানুষ। গান কীভাবে উপভোগ করতে হয়, তার পদ্ধতিটাও বদলে গেছে।’
জিনিয়াসের পেজভিউ বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, নতুন গানের চেয়ে পুরোনো রক গান মানুষ খোঁজে বেশি। কিন্তু লোকসংগীতের ক্ষেত্রে আবার উল্টোটাও দেখা যায়। এ থেকে ধারণা করা যায়, যাঁরা রক সংগীত পছন্দ করেন, তাঁরা পুরোনো গানের ভক্ত। আর লোকসংগীতে নতুন গানের শ্রোতা বেশি। গবেষক জাঙ্গারলে জটিল গান লেখার উদাহরণ হিসেবে ১৯৭৩ সালের ব্রুস স্প্রিংসটিনের স্পিরিট ইন দ্য নাইটকে উদাহরণ হিসেবে টানেন।