বান্দরবানের রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকে হামলা করে ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের রেশ না কাটতেই থানচি উপজেলার সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকেও হামলা করে লুট করেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। আজ বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে থানচি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আজ দুপুরে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ২৫-৩০ জনের একটি অস্ত্রধারী গ্রুপ দুটি মাহিন্দ্র গাড়ি নিয়ে থানচি বাজারে এসে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালায়। এ সময় সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা এবং কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি ঘরে জিম্মি করে গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
কৃষি ব্যাংকের থানচি উপজেলার শাখার ব্যবস্থাপক হ্লা সুই থোয়াই বলেন, ‘তারা (সন্ত্রাসী) চোখের পলকে আমাদের ব্যাংকে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে একটি কক্ষে নিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।’এ ঘটনার পর থেকে থানচি বাজারে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। মানুষজন ঘরবাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। বাজারে দোকান পাটও অনেকে বন্ধ করে রেখেছেন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলায়। এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার শৈকত শাহীন বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য ব্যাংকে হানা দেয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে।’
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায় কেএনএফ সদস্যরা। এ সময় তারা ব্যাংকের নিরাপত্তায় থাকা ১০ পুলিশ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যদের ৪টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় এবং ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে কেএনএফ’র শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রুমা সোনালী ব্যাংক ও রুমা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান নিয়ে ঘেরাও করে। এসময় তারা মসজিদের মুসল্লি ও ব্যাংকে হানা দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারধর করে তাদের ১০টি অস্ত্র কেড়ে নেয়। পরে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা মসজিদ থেকে ব্যাংক ম্যানেজারকে ডেকে নিয়ে আসে এবং ব্যাংকের ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। ব্যাংকের ভল্ট ভাঙতে না পেরে ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা।
ওই ঘটনার পর থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপজেলাজুড়ে। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে আজ সকালে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সোনালী ব্যাংকের শাখাটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা ভল্টের বিষয়টি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করে। পরে সিআইডি ক্রাইম সিনটি পর্যবেক্ষণ করে।এ বিষয়ে ক্রাইম সিন ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ নেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘টেকনিক্যাল কারণে সন্ত্রাসীরা ভল্ট থেকে টাকা লুট করতে পারেনি। আমরা ভল্ট থেকে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।’
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, রুমা ও থানচিতে ব্যাংক লুটের ঘটনাটি কারা ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।আইজিপি বলেন, অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাহাড়ের শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।