Skip to content

কুমিল্লার ভোট ‘পরীক্ষা’ নেবে অনেকের

    কুমিল্লার ভোট ‘পরীক্ষা’ নেবে অনেকের prothomasha.com

    ভোটের ফলাফল যা–ই হোক, এবারও সিটি নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন ও সাবেক মেয়র মনিরুল হককে নিয়ে কুমিল্লার রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে। গত সিটি নির্বাচনে বাহাউদ্দিনের প্রার্থী আরফানুল হকের কাছে মাত্র মাত্র ৩৪৩ ভোটে হেরেছিলেন মনিরুল হক (সাক্কু)। এবার বাহাউদ্দিন (বাহার) তাঁর মেয়ে তাহসীন বাহারকে মেয়র পদে প্রার্থী করেছেন। স্থানীয় মানুষের মধ্যে আলোচনা আছে, এবারের ভোট সংসদ সদস্য বাহারের জন্য ‘বড় পরীক্ষা’। একইভাবে এবারের ভোট ‘পরীক্ষা’ নেবে মনিরুলেরও।

    কুমিল্লা সিটিতে এবার মেয়র পদের উপনির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে তাহসীন ছাড়া তিনজনই পুরোনো মুখ। এর মধ্যে দুবারের মেয়র মনিরুল এবার ‘টেবিলঘড়ি’ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তাহসীন বাহার পেয়েছেন ‘বাস’ প্রতীক। অন্য দুই প্রার্থী নূর উর রহমান মাহমুদ (তানিম) ‘হাতি’ প্রতীক এবং মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন কায়সার পেয়েছেন ‘ঘোড়া’ প্রতীক। নিজামউদ্দিন গতবার মেয়র পদে ২৯ হাজার ৯৯ ভোট পেয়ে আলোচনায় আসেন। আর তানিম ২০১২ সালে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে ৮ হাজার ৫১৪ ভোট পেয়েছিলেন। কুমিল্লার রাজনীতিতে ভবিষ্যতে নিজামউদ্দিন ও তানিমের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এবারের নির্বাচন এক অর্থে সেই ‘পরীক্ষাও’ নেবে।

    চার প্রার্থীর মধ্যে তাহসীন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। অন্যদিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি তানিম এখন মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। মনিরুল হক কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নিজামউদ্দিন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন। এখন আর তাঁরা কোনো পদে নেই। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে গত সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় দুজনকেই বহিষ্কার করা হয়। সে বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার হয়নি। যদিও দুজনেই বিএনপির সঙ্গেই আছেন এবং দলীয় কর্মসূচিতেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৫ ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন মনিরুল হক ।

    এ প্রসঙ্গে মনিরুল হক  বলেন, ‘আমি অলরেডি মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি কিছু জিগাইছে না। আমি শুধু বলেছি, ভাই আমি অটল (নির্বাচনের বিষয়ে) আছি। উনি বলেছেন, অটলভাবে থাকো।’ নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়রের শূন্য পদে উপনির্বাচন হবে। ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটির নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক ৫০ হাজার ৩১০ ভোটে মেয়র হন। মনিরুল হক পান ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার দেড় বছরের মাথায় গত ডিসেম্বরে মারা যান আরফানুল। যে কারণে মেয়র পদে উপনির্বাচন হচ্ছে।

    কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে গতকাল শুক্রবার সকালে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর জুমার নামাজের আগে ও পরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেন চার প্রার্থী। শহরের বিভিন্ন এলাকায় চার প্রার্থীর সমর্থনে পৃথকভাবে মিছিল করেছেন তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা। এ ছাড়া ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকেও প্রচার শুরু হয়েছে। কুমিল্লা সিটির মেয়র পদের ভোট নিয়ে গতকাল প্রথম আলো কথা বলেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ১২ জন নেতার সঙ্গে। তাঁরা মনে করেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটাররা চার ভাগে বিভক্ত হবেন। একদিকে তাহসীন ও তানিম, অন্যদিকে মনিরুল হক ও নিজামউদ্দিন। যদিও গতবারও বিএনপির ভোট মনিরুল হক ও নিজামউদ্দিনে বিভক্ত ছিল। শেষ পর্যন্ত ভোটের হিসাবে দেখা যায়, মনিরুলের পরাজয়ের কারণ হয়ে ওঠেন নিজাম। এবার বিএনপির সমর্থকদের ভোট কার পক্ষে বেশি যাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

    মেয়র পদপ্রার্থী নিজামউদ্দিনের দাবি, মনিরুল হক বরাবরই আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলেন, সেটি নানাভাবে প্রমাণিত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত নির্বাচনে ওনার (মনিরুল হক) প্রতি যে আকর্ষণ ছিল, তা এবার আর নেই। এই মুহূর্তে ৯০ ভাগ নেতা-কর্মী ও সমর্থক আমার পক্ষে। গত নির্বাচনে আমাকে ৩০ হাজার ভোট দিয়ে মানুষ পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে।’ অবশ্য গত সিটি নির্বাচনে মনিরুল হককে হারাতে সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিনের সঙ্গে নিজামউদ্দিন ও তাঁর ভগ্নিপতি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশীদ ইয়াছিন সমঝোতা করেছিলেন—এমন অভিযোগ উঠেছিল। বিএনপি সমর্থকদের ভোট কাটতে নিজামউদ্দিনকে প্রার্থী করার কথা তখন কুমিল্লার রাজনীতিতে বেশ আলোচিত ছিল। এবারও একই অভিযোগ করেছেন মনিরুল হক।

    এ বিষয়ে মনিরুল হক  বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সে (নিজামউদ্দিন) নির্বাচনে দাঁড়ায়। না হয় তার দাঁড়ানোর যুক্তিটা কী। সে আমার থেকে ১৭ বছরের ছোট। এইবারও কায়সারের (নিজামউদ্দিন) কাছে, ইয়াছিন ভাইয়ের কাছে লোক পাঠাইছি। তিনটা বছর (নির্বাচিত মেয়রের মেয়াদ থাকবে) আছে, আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনটা করি। উনি (ইয়াছিন) বসতেই রাজি না।’ দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এবার সিটি নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির হিসাবটা একটু জটিল। কারণ, গত নির্বাচনে বিএনপির দুজন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ছিলেন আরফানুল হক। এবার তাহসীনের সঙ্গে তানিমও প্রার্থী। ফলে দুজনের মধ্যে কম-বেশি ভোট ভাগাভাগির একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

    এ ছাড়া এবার নৌকা প্রতীক না থাকাটাও আওয়ামী লীগের জন্য ভোটের মাঠে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তাহসীন বাহারকে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই কমিটিরই সাংগঠনিক সম্পাদক তাঁর মেয়ে তাহসীন বাহার। স্থানীয় আওয়ামী লীগে আলোচনা আছে, তাহসীন রাজনীতিতে অনেকটাই নতুন। পুরোনো অনেক নেতাকে বাদ দিয়ে কৌশলে তাঁকে প্রার্থী করেছেন বাহাউদ্দিন। নিজের মেয়েকে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবেও ঘোষণা করেছেন তিনি। এসব নিয়ে প্রকাশ্যে নেতাদের কেউ জোরালো কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও ভেতরে-ভেতরে অনেকে বিষয়টি মানতে পারছেন না। তাহসিনের চেয়ে দলে অনেক অভিজ্ঞ ও দক্ষ নেতা রয়েছেন, যাঁরা প্রার্থী হওয়ার যোগ্য।

    অবশ্য তাহসীন বাহার দীর্ঘদিন থেকে তাঁর বাবা বাহাউদ্দিনের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার পাশাপাশি ‘জাগ্রত মানবিকতা’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে বাবা আমাকে ঢাকা থেকে এনে মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক করে দেননি। আমি বাবার নির্বাচনে যেমন কাজ করেছি, তৃণমূলেও কাজ করেছি। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের উন্নয়নে আমার সংগঠন নিয়ে কাজ করেছি। এখন যদি আমাকে এভাবে বলা হয়, আমি মনে করি, আমার শ্রম, মেধা, যোগ্যতাকে অবমূল্যায়ন করা হবে।’

    যদিও তাহসীনকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে স্বীকার করেন না তানিম। তিনি বলেন, ‘আমিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী। যেহেতু আমি মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করে, ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে, জেল খেটে, ক্রসফায়ারের মুখোমুখি হয়ে এই জায়গায় এসেছি। তাহসীন ওনার (বাহাউদ্দিন) মেয়ে, এটাই তাঁর যোগ্যতা’