Skip to content

কাশ্মীরের নির্বাচনে কেন গুরুত্বপূর্ণ জামায়াত-ই-ইসলামী

    কাশ্মীরের নির্বাচনে কেন গুরুত্বপূর্ণ জামায়াত-ই-ইসলামী prothomasha.com

    গত মে মাসে ভারতে সাধারণ নির্বাচনের সময় দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলাতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-ই-ইসলামীর একজন প্রথম সারির নেতা বুথে গিয়ে ভোট দিচ্ছেন, এই ছবি সারা উপত্যকায় হইচই ফেলে দিয়েছিল। কারণ সংগঠনটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সব নির্বাচন বয়কট করে আসছে। সেই ভোটে প্রশ্নে উঠেছে জামায়াত কি দেশের মূল ধারার রাজনীতিতে ফিরতে চাইছে।

    সেই নির্বাচনের পর চার মাস পরে এখন দেখা যাচ্ছে, জামায়াত-ই-ইসলামীর নেতারা সরাসরি এখন কাশ্মীরের ভোটে অংশ নিচ্ছেন ও বিভিন্ন আসনে লড়ছেন। এতে করে পুরো অঞ্চলের রাজনৈতিক মানচিত্রই পাল্টে গেছে।

    কাগজে-কলমে কাশ্মীরের জামায়াত অবশ্য এখনও নিষিদ্ধ সংগঠন এবং ২৫ আগস্টের মধ্যে সেই নিষেধাজ্ঞা যেহেতু প্রত্যাহার করা হয়নি, তাই তাদের পক্ষে সরাসরি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভবও ছিল না।

    তবে জামায়াতের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা অন্তত দশ-বারোটি আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন, কাশ্মীরের একজন বিতর্কিত ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ইঞ্জিনিয়ার রশিদের দল তাদের সমর্থনও করছে।

    এই কথিত ‘জামায়াত-ইঞ্জিনিয়ার’ জোট কাশ্মীরের পুরনো দু’টি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল – আবদুল্লা পরিবারের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও মুফতি পরিবারের নেতৃত্বাধীন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-কেও পেছনে ফেলে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    ন্যাশনাল কনফারেন্স আবার ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ও আসন সমঝোতা করে ভোটে লড়ছে। পিডিপি ও বিজেপি এককভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

    জম্মু ও কাশ্মীরে এবারে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে দশ বছরেরও বেশি সময় পরে – এর মধ্যে ওই অঞ্চলটি ভারতের একটি পূর্ণ অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা হারিয়েছে, লাদাখ অঞ্চলটিও রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

    পাঁচ বছর আগে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করার মধ্যে দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ স্বীকৃতিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সেই বিতর্কিত পদক্ষেপের পর এই প্রথম ওই অঞ্চলে বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

    আজ বুধবার জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার সেই ভোটে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। ৯০ আসনের বিধানসভায় ভোট নেওয়া হবে মোট তিনটি পর্বে, আজকের প্রথম দফার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ হবে যথাক্রমে ২৫ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর।

    এরপর ৪ অক্টোবর পুরো অঞ্চলের ভোটগণনা হবে একই সঙ্গে। জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে একই দিনে ভোটগণনা হবে হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনেরও।

    কাশ্মীরের জামায়াত-ই-ইসলামী কারা?

    জামায়াত এমন একটি সংগঠন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ-সহ দক্ষিণ এশিয়ার নানা প্রান্তেই যাদের সরব উপস্থিতি আছে। কাশ্মীরের জামায়াত অবশ্য আদর্শগত ও ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের জামায়াতেরই বেশি ঘনিষ্ঠ।

    শ্রীনগর-ভিত্তিক সাংবাদিক ও গবেষক আকিব জাভেদ বলেন, কাশ্মীরেও জামায়াতের অন্তত পাঁচ হাজার সক্রিয় সদস্য আছেন, যারা ‘ফুলটাইমার’ বা সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে সংগঠনের কাজকর্ম করেন।

    বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও ইসলামী চর্চাকেন্দ্র স্থাপনের মধ্যে দিয়ে তারা পুরো উপত্যকাজুড়েই বিরাট নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। তবে জামায়াত অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি এজেন্সির হানা বা তল্লাসিও খুব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

    জামায়াত ১৯৮৭ সালে রাজ্য বিধানসভার ভোটে শেষবারের মতো লড়েছিল। পর্যবেক্ষকরা বলেন, সেই ভোটে তাদের ভাল ফল করার সম্ভাবনা থাকলেও কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের মদতে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে ফারুক আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্সকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

    কয়েক মাসের মধ্যেই কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়। আর জামায়াত নির্বাচন বয়কট করে প্রধানত ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে বেশি মনোযোগ দিতে থাকে।

    ২০১৯-এ পুলওয়ামাতে যে জঙ্গী হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় আধা সামরিক সেনা নিহত হয়, তারপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

    সরকারের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, জামায়াতের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদে উসকানি দেওয়ার’ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদে ইন্ধন জোগানোর লক্ষ্যে ‘ভারত-বিরোধী প্রোপাগান্ডায় যুক্ত থাকার’ প্রমাণ মিলেছে বলেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

    এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। এর আগেও আবশ্য ১৯৭৫ ও ১৯৯০ সালেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।