আমদানি কমাতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত আছে। রপ্তানি আয়ে সামান্য হলেও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এতে করে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। প্রবাসী বা রেমিট্যান্স আয়ও কিছুটা বেড়েছে। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে চলতি হিসাবে এখন আর ঘাটতি নেই। তবে প্রত্যাশিত অনুযায়ী বিদেশি ঋণের ছাড় না হওয়া, ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়া, বিনিয়োগ কমাসহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। গত ডিসেম্বর শেষে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি রয়েছে ৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ৫৩৯ কোটি ডলার। অথচ গত বছরের একই সময়ে এ হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১৪ কোটি ডলার। আর্থিক হিসাবের বড় ঘাটতির কারণে সামগ্রিক লেনদেনেও উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে। সামগ্রিক লেনদেন পরিস্থিতির উন্নতির ওপর ডলার সংকটের সমাধানের অনেকটাই নির্ভর করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হিসাব প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ৬ মাসে আমদানি ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে ৩০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। একই সময়ে রপ্তানি শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ২৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমে এখন ৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন বা ৫৬০ কোটি ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৭ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। এতে আগামী জুন নাগাদ বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে উন্নতির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমান, আগামী জুন শেষে বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমে ১০ দশমিক ২০ বিলিয়নে নামবে। চলতি হিসাবে ঘাটতি হবে মাত্র ৩৩ কোটি ডলার। জুন নাগাদ আর্থিক হিসাবে ২০ কোটি ডলার উদ্বৃত্তের আশা করা হয়েছে। এ ছাড়া রিজার্ভও এখনকার চেয়ে ৪ বিলিয়ন বৃদ্ধির আশা করা হয়েছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ১৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। উন্নতির আশার পেছনে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণস্থিতি কমে আসায় আগামীতে পরিশোধের চাপ কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছর আমদানি আরও কমবে বলে ধারণা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আর্থিক হিসাবের অন্যতম উপাদান হলো বিদেশি বিনিয়োগ। আলোচ্য ৬ মাসে মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ১৮২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম। এ সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ৯৫ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা মাত্র ২ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। আমদানি হ্রাস এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধির কারণে চলতি হিসাবের ঘাটতি থেকে এখন উদ্বৃত্ত হয়েছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে যেখানে ঘাটতি ছিল ৪ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন বা ৩৬৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।