জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এবং এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশ এর আয়োজনে মিডিয়া ফেলোশিপ ২০২৪ এর জন্য মনোনীত সাংবাদিকবৃন্দের অংশগ্রহণে ওরিয়েন্টেশন সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল বিকাল ৩ টায় এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফেকচারার্স এন্ড ইমপোর্টার্স অব বাংলাদেশ এর আয়োজনে এবং জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের নতুন সভাকক্ষে (১ কারওয়ান বাজার, টিসিবি ভবন, ১২তম তলা, ঢাকা) মিডিয়া ফেলোশিপ ২০২৪ এর জন্য মনোনীত সাংবাদিকবৃন্দের অংশগ্রহণে ওরিয়েন্টেশন সেশনের আয়োজন করা হয়। বর্ণিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেনসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জামাল উদ্দিন, ফেলোশিপপ্রাপ্ত সাংবাদিকবৃন্দ, এসোসিয়েশনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বাগত জানান। তিনি সামগ্রিকভাবে ফেলোশিপ কার্যক্রমের ফলাফল অধিদপ্তরের কাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি ফেলোশিপ কার্যক্রমের সফলতা কামনা করে তার বক্তব্য শেষ করেন।
অত:পর এসোসিয়েশন অব স্কিনকেয়ার এন্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জামাল উদ্দিন মিডিয়া ফেলোশিপ-২০২৪ সম্পর্কে পাওয়ার পয়েন্ট পেজেনটেশন উপস্থাপন করেন। তিনি অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, অধিদপ্তরের কার্যক্রম পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে আরও বেশি দৃশ্যমান। তিনি প্রসাধনীর ব্যবহার ও উপযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে।
আলোচনায় মহাপরিচালক অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে কসমেটিকস পণ্যের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অসঙ্গতি যথা কসমেটিকস পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য এবং সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উপাদান, পরিমাণ, ব্যবহারবিধি, উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ না থাকা, প্রাইসগান মেশিনের সাহায্যে খুচরা বিক্রেতা নিজেই সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রদান করা, আমদানিকারক কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য কেটে অধিক মূল্য লেখা, বিদেশী পণ্য নকল করে দেশের অভ্যন্তরে তৈরি করে বিদেশী পণ্য হিসেবে বিক্রয় করা হয়, নকল কসমেটিকস পণ্যের ক্ষেত্রে সঠিক মানদন্ড না থাকা এবং বিএসটিআই কর্তৃক নিষিদ্ধ/অনুমোদনহীন Face Cream, Whitening Cream সহ অন্যান্য কসমেটিকস বিক্রয় ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিদেশি কসমেটিকস এর ক্ষেত্রে আমদানীকারকের তথ্য থাকে না এবং আমদানীকারক কর্তৃক এমআরপি প্রদান করা হয় না। এছাড়াও কসমেটিকস পণ্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যা ভোক্তার ত্বকের ক্ষতি করছে।
তিনি আরও বলেন, অধিদপ্তর ভোক্তার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সুরক্ষা প্রদান করেন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, দেশীয়ভাবে প্রসাধনী প্রস্তুতকরণ ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগকে আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। কেননা এর মাধ্যমে দেশিয় শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ হচ্ছে, প্রসাধনীর আমদানি হ্রাস পাচ্ছে এবং সর্বোপরি ভোক্তাগণ মানসম্মত প্রসাধনী পাচ্ছেন। ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় জনসচেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের সম্পৃক্ত করার জন্য মিডিয়া ফেলোশিপ প্রদান কার্যক্রম মাইলফলক হয়ে থাকবে। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় আমরা এসসোসিয়েশন ও গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। ফেলোশিপ প্রাপ্ত সাংবাদিকবৃন্দের রিপোর্টের মাধ্যমে প্রসাধনী সেক্টরের অনিয়মসমূহ দূর হবে এবং ভোক্তাগণ সচেতন হবেন। এছাড়াও এসকল রিপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
মুক্ত আলোচনায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ কর্তৃক উত্থাপিত প্রসাধনী সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। সভাপতির বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান ফেলোশিপপ্রাপ্ত সাংবাদিকবৃন্দদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি নকল প্রসাধনীর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে তিনি, নকল প্রসাধনীর বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে সহযোগিতা করার জন্য সাংবাদিকবৃন্দের প্রতি আহবান জানান। পরিশেষে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিডিয়া ফেলোশিপ ২০২৪ এর ওরিয়েন্টেশন সেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।