ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’–তে থাকা ২৩ নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে হক মো. নাজমুল (২৩) একজন। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের মুকবেলাই চর-নুরনগর গ্রামে । তিনি জাহাজটির ওয়েম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় মা-বাবার সঙ্গে নাজমুল সর্বশেষ কথা বলেন।
সরেজমিনে কামারখন্দের চরনুরনগর গেলে দেখা যায়, নাজমুলের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তাঁর বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকাবাসী। এ সময় নাজমুলের মা ও স্বজনেরা নানান আর্তি জানান। ছেলের খবর শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বাবা আবু সামা শেখ। তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।দুই ভাই–বোন ও মা-বাবাকে নিয়ে চারজনের সংসার নাজমুলের। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর এক বছর হলো জাহাজে চাকরি করছেন তিনি। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজে কাজ শুরু করেন। এর আগে আরেকটি জাহাজে ছিলেন নাজমুল।
গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে শেষ কথা হয় নাজমুলের। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। সাগর পথে আফ্রিকা থেকে দুবাইয়ের দিকে যেতে ২৩ জন নাবিক-ক্রুর সঙ্গে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হন নাজমুল। সবার মোবাইল জব্দ করা হলেও নাজমুল কৌশলে একটি মোবাইল সেট গোপনে লুকিয়ে রাখেন। তা দিয়েই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
কান্না জড়িত কণ্ঠে নাজমুলের মা নার্গিস খাতুন বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে নাজমুল কল দিয়ে বলে– মা, আমাদের ২৩ জনকে আটকে রেখেছে। আমাদের জন্য দোয়া করো। এই কথাই হয়তো শেষ কথা, আর কথা বলা যাবে না, তবে প্রয়োজনে এসএমএস দিও। এই বলে আমার বুকের মানিক ফোন কেটে দেয়।’নার্গিস খাতুন আরও বলেন, ‘নাজমুলের আয়েই আমাদের সংসার চলে। ছেলের বিপদের কথা শুনে আগের চেয়েও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে ওর বাবা। তিন ছেলের মৃত্যুর পর নাজমুলের জন্ম হয়েছে, ওরে ছাড়া আমি বাচমু না।’ নাজমুলসহ বাকি জিম্মিদের জীবিত ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি।
নামজুলের বোন লিপি বলেন, ‘আমার ভাই ও আমি বাদে পৃথিবীতে মা-বাবার কেউ নেই। ভাইয়ের বিপদের কথা শুনে মা-বাবা খাওয়া–দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আমরা সংবাদটি জানার পর তাঁর (নাজমুল) পরিবারের খোঁজ খবর রাখছি, কামারখন্দের ইউএনওকে নাজমুলের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।’