Skip to content

ইসলামপুরের পাইকারি ব্যবসা পুরো জমেনি 

    ইসলামপুরের পাইকারি ব্যবসা পুরো জমেনি prothomasha.com

    দেশে কাপড়ের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বছরজুড়েই কেনাবেচা চলে। তবে ব্যবসার বড় অংশই দুই ঈদকেন্দ্রিক। ঢাকাসহ সারা দেশের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দরে বিভিন্ন ধরনের থান কাপড় ও তৈরি পোশাক কিনে নেন। তবে এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঈদকেন্দ্রিক কেনাবেচা আশানুরূপ হয়নি।

    পুরান ঢাকার ইসলামপুর থান কাপড় ও তৈরি পোশাকের বড় পাইকারি বাজার হিসেবেই সমধিক পরিচিত। সাধারণত পবিত্র ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে কয়েক মাস আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে থান কাপড় কিনতে শুরু করেন। এরপর তাঁরা নিজেদের কারখানায় সেই কাপড় দিয়ে তৈরি করা পোশাক খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। ইসলামপুরে পাইকারি দরে শাড়ি–লুঙ্গি থেকে শুরু করে শার্ট-প্যান্ট, পায়জামা-পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। শবে বরাতের কয়েক দিন আগে এই বাজারে ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনা শুরু হয়। তবে জমে উঠে রোজার প্রথম সপ্তাহে। আর রোজার শেষ দিকে এসে আরেক দফা বেচাকেনা বৃদ্ধি পায়।

    গত সপ্তাহে ইসলামপুরের কয়েকজন ব্যবসায়ী  জানান, চলতি বছরে তাঁদের ঈদকেন্দ্রিক তৈরি পোশাকের বেচাকেনা তুলনামূলক কম হচ্ছে। এ কারণে ইসলামপুরের চিরচেনা যানজটও চোখে পড়ছে না। মোগল আমলে বাংলার সুবাদার ইসলাম খাঁ চিশতির নামানুসারে এই এলাকার নামকরণ হয়েছে ইসলামপুর। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ১৭৭৩ সাল থেকে এখানে কাপড়ের পাইকারি ব্যবসা শুরু হয়। এর আগে ইসলামপুরে ফলের ব্যবসাই ছিল প্রধান। সে জন্য এলাকাটিকে আমপট্টি বলা হতো। তাই ঐতিহাসিক বিবেচনায় ইসলামপুরকে বাংলাদেশে কাপড়ের ব্যবসার সবচেয়ে প্রাচীন কেন্দ্র বলে মনে করা হয়।

    ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসা একপর্যায়ে সদরঘাটসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এসব এলাকায় বিক্রমপুর গার্ডেন সিটি, গুলশান আরা সিটি, সাউথ প্লাজা, জাহাঙ্গীর টাওয়ার, চায়না মার্কেটসহ ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক মার্কেটে পোশাক ও কাপড় বেচাকেনা হয়। মার্কেটগুলোয় সব মিলিয়ে দোকানের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ইসলামপুরে দেশি-বিদেশি থান কাপড় থেকে শুরু করে থ্রি–পিস, শাড়ি, লুঙ্গি, বাচ্চাদের পোশাক, বিছানার চাদর, পর্দার কাপড় ইত্যাদি পাওয়া যায়। তা ছাড়া বোতাম, জিপার, ইলাস্টিকসহ পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়। সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ইসলামপুরের ব্যবসায়ী নেতারা জানান, এই এলাকায় বছরে ২৫–৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়, যার বড় অংশই হয় রোজার মাসে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশীয় বস্ত্রকল থেকে ক্রয়াদেশ দিয়ে কাপড় তৈরি করে আনেন ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি বস্ত্রকল মালিকের দোকানও আছে এখানে। এ ছাড়া ইসলামপুরভিত্তিক আমদানিকারকেরা তো আছেনই। তাঁরা ভারত ও চীন থেকে কাপড় আমদানি করেন।ব্যবসায়ীরা জানান, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার পোশাক আর কাপড়ও ইসলামপুরে কমবেশি আসে। এখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাঁরা তৈরি পোশাক বিক্রি করেন, তাঁরা শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি–পিসও দেশের বিভিন্ন বস্ত্রকল থেকে তৈরি করিয়ে আনেন। এ ছাড়া শার্ট, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাকের জোগান দিতে ইসলামপুরের আশপাশে ছোট ছোট অনেকগুলো কারখানা গড়ে উঠেছে।

    ইসলামপুরের জাকির ম্যানশনের রবি শাড়ির স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম গত সপ্তাহে  বলেন, গত বছর এই সময়ে প্রতিদিন ১৫–১৭ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়েছে। এবার সেই বিক্রি কমে দিনে তিন–চার লাখে নেমেছে। এবার রোজার শুরু থেকেই বেচাকেনা কম। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা কাপড়চোপড় কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, কাপড়ের দাম গত বছরের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেচাকেনা কমে যাওয়ার এটিও একটি কারণ। ব্যবসায়ীদের একাংশ দাবি করেন, করোনার পর থেকে ইসলামপুরের ব্যবসা-বাণিজ্যে তার আগের রূপ হারিয়েছে। করোনার সংক্রমণ কমার পর শুরু হয় অর্থনৈতিক সংকট। তাই ব্যবসা আর আগের অবস্থায় ফেরেনি। এ বাজারের কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলেন, অনেকে এখন ইসলামপুর থেকে কাপড় কিনে নিয়ে অনলাইনে বিক্রি করছেন। তাতে এ বাজারের ব্যবসা মার খাচ্ছে।

    জানতে চাইলে মীম ফেব্রিকসের বিক্রেতা রহমত উল্লাহ  বলেন, ‘পাইকারিতে খুব বেশি ব্যবসা হয়নি। এখন খুচরা বিক্রির দিকে আমাদের নজর। ঢাকার আশপাশের পাইকারি বাজারগুলোও এখন অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় আগের মতো দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতা আসা কমে গেছে।’ ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নেসার উদ্দিন মোল্লা  বলেন, সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা এ বছর তেমন ভালো নয়। মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ব্যবসা–বাণিজ্যের ওপর। সব মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা–বাণিজ্য কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ কারণে এবার ব্যবসায়ীরা কম পরিমাণে কাপড় তৈরি করেছেন।