মাত্র ৬ বছর বয়সেই বিজ্ঞাপনচিত্রের ক্যামেরার সমানে দাঁড়ায় শিশুটি। আর ৯ বছর বয়সেই টেলিভিশন অভিনয়ের হাতেখড়ি। বছরে একটি কখনো দুটি করে কাজ করতে থাকে। সেই হিসাবে বলতে গেলে দুই বছরের ক্যারিয়ার। এই সময়েই সে হয়ে উঠেছে হলিউডের জনপ্রিয় শিশু চরিত্রের অভিনেত্রী। শুধু তাই নয়, গত দুই বছরেই তার ৫ লাখ ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ কোটি টাকার বেশি। এই শিশুর নাম আলায়লা ব্রাউন। চিনতে পেরেছেন তিনি কে? ‘ম্যাড ম্যাক্স’ ফ্র্যাঞ্চাইজির সর্বশেষ কিস্তি ‘ফিউরিওসা: আ ম্যাড ম্যাক্স সাগা’ সিনেমার ‘ফিউরিওসা’র শিশু চরিত্রের অভিনেত্রী এই আলায়লা।
আলায়লা ব্রাউন প্রথম অভিনয় করেন ২০১৯ সালে। সেই সময় অল্প কিছু পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। টিভি সিরিজ ‘মিস্টার ইনবিটুইন’ দিয়ে শুরু। সেই বছর আর কাজের সুযোগ হয়নি। পরের বছরও একটি সিনেমায় একটি মাত্র কাজের সুযোগ হয়। ২০২২ সালটা যেন তাঁর ভাগ্য বদলে দেয়। তাতিয়ানা চরিত্রে ‘নাইন পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার’ সিরিজে নিকোল কিডম্যানের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। রহস্য ও থ্রিলার এই সিরিজ তাঁর ভাগ্য এতটা বদলে দেবে সেটা ভাবনার বাইরেই ছিল। আলায়লা পরে জর্জ মিলারের চোখে পড়েন। এই বিখ্যাত পরিচালকের ‘থ্রি থাউজেন্ড ইয়ার অব লংগিং’ সিনেমায় নির্বাচিত করেন। ফ্যান্টাসি ঘরানার এই সিনেমা তাঁকে আরও বেশি খ্যাতি এনে দেয়।
পরের বছর দুটি সিনেমা ও একটি সিরিজে অভিনয় করেন আলায়লা। শিশুশিল্পী হিসেবে পাকাপোক্ত হয় ক্যারিয়ার। পরে নাম লেখান ভৌতিক ও থ্রিলার সিনেমা ‘স্ট্রিং’ এ। সিনেমাটি গত ১২ এপ্রিল মুক্তি পায়। সিনেমাটি দিয়েও নজর কাড়েন এই অভিনেত্রী। তখনো তিনি জানতেন না তাঁর ভাগ্যে কি রয়েছে। কারণ গত বছর শুটিং শেষ করা ‘ফিউরিওসা: আ ম্যাড ম্যাক্স সাগা’ নিয়ে ভক্তদের আগ্রহের শেষ নেই। সিনেমাটি নিয়ে আশাবাদী ছিলেন তিনিও। সেই সিনেমা দিয়ে এখন আলোচনায় এই খুদে। ২৪ মে সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেয়েছে। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বক্স অফিস। এখানে শিশু চরিত্রে নজর কেড়েছেন তিনি। সিনেমাটিতে ৩৫ ভাগ ছিল তার উপস্থিতি। এই সময়ে ৮০ ভাগ সময়ই তিনি পর্দায় দখল করে ছিলেন।
কে এই আলায়লা ব্রাউন? আলায়লা এস্তোনিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিক। বড় হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে। এখন অভিনয়ই ধ্যানজ্ঞান। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ভবিষ্যতে পশুপাখি রক্ষা করতে কাজ করতে চান। শুটিং ব্যস্ততার বাইরে স্কুলে পড়াশোনা নিয়ে থাকতে হয়। সময় পেলে তিনি ঘুরতে বের হন। তবে ঘোরাঘুরির সময় তাঁর সঙ্গে পোষা কুকুর, মুরগি ও বিড়াল নিতে মোটেও ভোলেন না। শুধু তাই নয়, এ ছাড়া তাঁর অদ্ভুত শখ রয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি শখের বাগানের মালিও হতে চান।
তাঁর এগিয়ে চলার পেছনে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। মায়ের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে আলায়লা বলে, ‘আমার মা চাইতেন আমি অভিনয় করি। মা আমাকে প্রথম অভিনয়ের জন্য এজেন্সির কাছে নিয়ে যান। তখন আমার বয়স ছয়। পরে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়েছেন মা। আমাকে ফিউরিওসা চরিত্রের জন্য পরিচালকের কাছে নিয়ে যান সিনেমাটির প্রধান সহকারি পরিচালক। তখন সঙ্গে সঙ্গে পরিচালক স্যার আমাকে দেখে জানান, সেই আমাদের ফিউরিওসা। এটা আমার জন্য অন্যতম প্রাপ্তি। মাকে ছাড়া আমার পাওয়া অসম্ভব ছিল।’
শিশু চরিত্রের ‘ফিউরিওসা’ কেন আলোচনায়? এবার সিনেমার গল্পে ফেরা যাক। গ্রিন প্লেস অব মেনি মাদারস থেকে ফিউরিওসার জায়গা হয় নারকীয় জগতে। পৃথিবীতে পরিবেশ বিপর্যয় নেমে আসার পর অল্প বয়সী মেয়ে ফিউরিওসাকে ঘটনাক্রমে ছিনিয়ে নিয়ে যায় লুটেরা বাহিনী। কিন্তু বুদ্ধি দিয়ে বারবার শিশুটি বাঁচতে চায়। তাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে তার মা। একসময় লুটেরা বাহিনীর কাছ থেকে সে মায়ের সঙ্গে পালায়। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারে না। চোখের সামনেই মাকে নির্যাতনের ঘটনা দেখে। মা তাকে পালিয়ে যেতে বললেও সে মায়ের কাছ থেকে কোথায় যায় না। এবার পাকাপাকিভাবেই বন্দী হয়ে যায় ফিউরিওসিয়া। কিশোর থেকে তরুণী হয়ে ওঠা মেয়েটির রুদ্ধশ্বাস সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ফিউরিওসা: আ ম্যাড ম্যাক্স সাগা’। সিনেমায় প্রধান চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন এই শিশু, ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে অংশ নিয়েছেন। যা দর্শকদের চোখে আলাদা করে নজর কাড়ে।
অস্ট্রেলিয়ান পরিচালক জর্জ মিলারের পরিচালনায় তরুণী ফিউরিওসা চরিত্রে তরুণী বয়সে অভিনয় করেছেন আনিয়া টেলর-জয়। শৈশবের চরিত্রের সঙ্গে এআই দিয়ে তাঁর চরিত্রের মিল আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন সিনেমাটির ভক্তরা। কেউ কেউ বর্জনের কথাও বলছেন। এ ছাড়া সিনেমায় প্রশংসা পেয়েছেন খল চরিত্রের অভিনেতা ক্রিস হেমসওয়ার্থ। গেল কান চলচ্চিত্র উৎসবে আউট অব কম্পিটিশন শাখায় সিনেমাটির বিশেষ প্রদর্শনী। সিনেমাটির প্রদর্শনীর ৭ মিনিট ধরে স্ট্যান্ডিং ওবেশন পায়। ২৪ মে সিনেমাটি সারা বিশ্বে মুক্তি পায়। ২৬ মে পর্যন্ত সিনেমাটির আয় ৫৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার।