Skip to content

‘আমরা যদি আওয়ামী লীগের মতো শুরু করি, আওয়ামী লীগের মতোই দশা হবে’

    ‘আমরা যদি আওয়ামী লীগের মতো শুরু করি, আওয়ামী লীগের মতোই দশা হবে’ prothomasha.com

    বিএনপি নেতাকর্মীরা যদি আওয়ামী লীগের মতো শুরু করে তাহলে তাদেরও আওয়ামী লীগের মতোই দশা হবে বলে মন্তব্য করেছন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত সম্প্রীতি ও গণতন্ত্র রক্ষায় ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা এবং তার দোসরদের বিচারের দাবিতে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

    মিজা ফখরুল বলেন, ‘মনে রাখবেন এই মুক্ত সেই পর্যন্ত মুক্ত থাকবে, স্বাধীন থাকবে, যতদিন আমরা এটাকে স্বাধীন রাখতে পারব। আমরা যদি এখন আওয়ামী লীগের মত শুরু করি, তাহলে কি আমরা টিকতে পারব? আমাদেরও আওয়ামী লীগের মতোই দশা হবে। এ জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আমরা আকুণ্ঠ অনুরোধ থাকবে আপনারা নিজেদেরকে মানুষের কাছে প্রিয় বানান। কারও ওপর অন্যায়-নির্যাতন করবেন না।’

    সনাতনী ধর্মের মানুষদের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবে হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিশাল একটা অংশ রয়েছে যারা সনাতনী ধর্মের মানুষ। তারাতো আমাদের আমানত, আমরা হচ্ছি বৃহত্তর সংখ্যাগোষ্ঠী। তাই এই আমানত রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। সামনে দূর্গাপুজা আসছে, সেই পুজায় যেন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা হয়, সেগুলো আমাদের দেখতে হবে।’

    ভারতের সঙ্গে আমরা ভালোভাবে থাকতে চাই মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘পাশেই আমাদের ভারত আছে না, অনেক খারাপ কাজ করে তারা, তাই না। আমাদের লোকজনকে গুলি করে মেরে দেয় সীমান্তে। আমরা ভালো ভাবে থাকতে চাই তাদের সঙ্গে, প্রতিবেশী হিসেবে থাকতে চাই। কিন্তু আমাদের ওপর যদি কোনো অন্যায়-অত্যাচার হয় তাহলে আমরা প্রতিবাদ জানাব।’

    ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ কিছু কিছু জিনিসকে এতবেশি খারাপ করে দিয়ে গিয়েছে, যেমন ভোটের ব্যবস্থা, মানুষ ভোট দিতেই পারে না, অতীতে যেগুলো ভোট হয়েছে সেগুলো ভোট হয়নি। এই ভোট ব্যবস্থাকে ঠিক করা দরকার। সবাই যেন ভোট দিতে পারে, যার ভোট সে দিবে, যাকে খুশি তাকে দিবে। সেই ভোটের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিধি নির্বাচিত করব। এই ভোট ব্যবস্থাকে ঠিক করার সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে দিতে হবে। অন্তবর্তী সরকার কাজ শুরু করেছে, এরা সবাই নিরপেক্ষ মানুষ, কোনো রাজনীতি করে, এরা দেশটাকে ভালোবাসে এবং দেশের জন্য কিছু করতে চায়। আমাদের দায়িত্ব হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করা।’

    তিনি আরও বলেন, ‘হাসিনা সবচেয়ে প্রতাপশালী নেতা হয়ে গিয়েছিল, বলা যায় রাজরানী হয়ে গিয়েছিলেন। তাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের তরুণ ছাত্র-যুব ও জনতার আন্দোলনের মাঝখান দিয়ে শেখ হাসিনা চলে যেতে হয়েছে। আজকে সেই প্রতাপশালী শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে একবারে করুণ অবস্থার মধ্যে পরে গেছে। আর যারা আমাদের এখানে দাপটের সঙ্গে শাসন করত, আমাদেরকে জেলে দিত, জুলুম করত, জমি নিয়ে নিতো, ব্যবসা নিয়ে নিতো, আমাদের কাউকে কিছু করতে দিতো না তারা এখন জেলের ভেতরে ঢুকে গেছে।’

    ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনি বলতেন পালাব না, কিন্তু উনি এখন কোথায়? আবার মাঝখানে আমাকে বিদ্রুপ করে বলেছিলেন, পালাবে না, যতি পালাতেও হয় দেশের বাইরে যাবেন না। আর আমরা নাম ধরে বলেছিলেন, ‘‘ফখরুল আপনি কি আপনার বাসায় আমাকে জায়গা দেবেন না।” এখন আমি ওবায়দুল কাদেরকে বলতে চাই- আসেন, আমার বাসায় আসেন। আপনি কোথায় চলে গেছেন দেশবাসী জানে না। আবার অনেকে বলে ভারতে নাকি চলে গেছে, কেন ভাই ভারতে কেন, দেশ তো আপনার, আপনি এখানে নির্বাচন করেন, এখানকার নেতা। আপনাকে ভারতে পালাতে হয়েছে কেন? কারণ আপনি এই দেশের মানে বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।’

    তিনি আরও বলেন, ‘যখন চুরি করেন তখন মনে থাকে না, যখন অত্যাচার করেন তখন মনে থাকে না। তখন মনে করেন এই ক্ষমতাটা আপনার চীরস্থায়ী। আল্লাহ বলেই দিয়েছেন, ‘‘সীমা লঙ্ঘনকারীকে আমি পছন্দ করি না। তোমরা টেরও পাবে না- আমি কোনদিন থেকে, কোন সময় সীমা লঙ্ঘনকারীদের ধ্বংস করে দিব”।’

    ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভয়াবহ এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার এই আন্দোলনের সময় কতগুলো খুন করেছে জানেন? এই আন্দোলনের সময় ২ হাজার মানুষ খুন করেছে। কারও হাত নেই, পা নেই, কারও মাথার খুলি উড়ে গেছে।’

    প্রশাসনকে উদ্দেশ্যে করে ফখরুল বলেন, ‘এখানে ইউএনও, ওসি সাহেব আছেন, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তরা আছেন। তখন উনারাও অনেক ঝামেলা করেছেন তাই না। এখন ঐ পথ থেকে সরে দাঁড়ান, কোনো খারাপ কাজ করবেন না। আপনারা মানুষজনের পাশে দাঁড়ান। বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা সবাই তাদেরকে সহযোগিতা করবেন। সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দর করতে চাই।’

    হরিপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীনসহ জেলা, উপজেলা ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ও রুহিয়া থানার আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন।