গত বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালে ইরানে ৮৩৪ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। সবশেষ দুই দশকের মধ্যে বছরটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফাসি কার্যকর হয়েছে দেশটিতে। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দুটি অধিকার গোষ্ঠী এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আল-জাজিরার।প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) ও প্যারিসভিত্তিক টুগেদার এগেইনস্ট দ্য ডেথ পেনাল্টি (ইসিপিএম) এক যৌথ প্রতিবেদনে ইরানের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশটিতে ফাঁসি কার্যকর বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।
২০২২ সালে ইরানি পুলিশের হেফাজতে মারা যায় মাহসা আমিনি। এরপরেই ইরানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। হামলা করা হয় নিরাপত্তা বাহিনী ওপর। আইএইচআর ও ইসিপিএম বলছে, ২০২২ সালের বিক্ষোভ চলাকালীন ৯টি মৃত্যুদণ্ড সরাসরি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার সাথে যুক্ত ছিল। অন্যান্য অভিযোগের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহারও বাড়ানো হয়েছিল।সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে মাদক সংক্রান্ত মামলাগুলোতে। ২০২৩ সালে ইরানে যত ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তার অর্ধেকই মাদক সম্পর্কিত মামলা। বছরটিতে মাদক মামলায় ৪৭১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ইরানের দক্ষিণ-পূর্বের সংখ্যালঘু সুন্নি বালুচ গোষ্ঠীর কথাও। সংখ্যালঘু গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে ফাঁসি কার্যকর বেড়েছে বলে জানানো হয়। গত বছর গোষ্ঠীটির ১৬৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, যা মোট ফাঁসি কার্যকরের ২০ শতাংশ। ইরানের মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ সুন্নি বালুচ গোষ্ঠীর।আইএইচআরের পরিচালক মাহামুদ আমিরি-মোঘাদ্দাম ফাঁসি কার্যকরের এই পরিসংখ্যানকে বিস্ময়কর বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক ভীতি জাগিয়ে তোলাই হল ক্ষমতা ধরে রাখার একমাত্র উপায়। মৃত্যুদণ্ড হল এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।’
তেহরানের এমন অবস্থায় বিশ্বকে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আমিরি-মোঘাদ্দাম বলেন, ‘ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার অসঙ্গতিপূর্ণ ও দুর্ভাগ্যজনক। ইরান কর্তৃপক্ষকে ভুল সংকেত পাঠাচ্ছে তারা।’প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশিরভাগ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে জেলে। আর সাতজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে জনসম্মুখে। এতে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালে ২২ নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।