চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি অপচয়ের কারণে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। বিগত অর্থবছরে প্রায় ৩০ শতাংশ পানির অপচয়ের কারণে এ ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও গত এক দশকে এ ক্ষতি বেড়েছে দাঁড়িয়েছে দিগুণ, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ১৫ দশমিক ২৪ শতাংশ।
চট্টগ্রাম ওয়াসার বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সংস্থাটি ২০২৩-২৪ সালে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫১১ মিলিয়ন পানি উৎপাদন করলেও রাজস্ব আয় হারিয়েছে ৫২ হাজার ৯৬২ মিলিয়ন লিটারের। এই হিসেবে লিটার প্রতি ১৯ দশমিক ৩৭ টাকা গড় শুল্কসহ সংস্থাটি রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। পানি বিতরণকারী দেশের চার রাষ্ট্রীয় সংস্থার মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার সিস্টেড়ে লসই সবচেয়ে বেশি।
এসব সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী ও খুলনা ওয়াসার সিস্টেম লসের হার ছিল যথাক্রমে সাড়ে ১৭ শতাংশ ও ২৯ শতাংশ। ২০২১-২২ সালে ঢাকা ওয়াসায় সিস্টেম লস ছিল ২০ শতাংশ।
নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, পাইপলাইন প্রতিস্থাপনসহ অন্যান্য খাতে ৬ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার সিস্টেম লস বেড়েই চলেছে।
অন্যদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, পাইপলাইনে লিকেজ, অবৈধ সংযোগ ও মিটারিংয়ে ত্রুটির কারণে সিস্টেম লস বাড়ছে। এছাড়াও কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করেছেন তারা।
এদিকে সিস্টেম লসের কারণে সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে তীব্র হচ্ছে পানি সংকট।
বন্দর নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার বাসিন্দা হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘আমি সপ্তাহে একবার পানি পেলেও ন্যূনতম বিলিং পদ্ধতিতে প্রতি মাসে প্রায় ৬০০ টাকা বিল দিতে হয়।’
পতেঙ্গার মকবুল আহমেদ সোসাইটি এলাকার ফারুক হোসেন জানান, আমরা প্রতি মাসে মাত্র ৮-১২ ইউনিট (১ ইউনিট= ১০০০ লিটার) পানি পেলেও গড় বিলিং সিস্টেমের আওতায় আমাদের কাছ থেকে ৩০ ইউনিটের জন্য চার্জ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অনেক গ্রাহকের কাছে বাস্তবে ব্যবহারের চেয়ে বেশি পানির জন্য বিল করা হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার কর্মী এস এম নাজের হোসেন বলেন, শুধুমাত্র ওয়াসার অদক্ষতার বোঝা গ্রাহককে টানতে হচ্ছে যেটি অত্যন্ত হতাশাজনক।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজের বলেন, শুধুমাত্র সিস্টেম লসের প্রভাব কমানো গেলে পানির দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। এছাড়াও কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিটার কারচুপির অভিযোগ করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম এটি স্বীকার করে বলেন, মিটারিংয়ে ত্রুটির কারণে পানি চুরি হয়ে থাকে। তিনি বলেন, দেশের সব পানি সরবরাহ সংস্থায় কমবেশি সিস্টেম লস হয়, তবে আমরা এটিকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এনআরডব্লিউ স্ট্যান্ডার্ড ১৫ শতাংশ বলে জানান তিনি।