থ্যালাসেমিয়া একধরনের জন্মগত রক্তরোগ, যা হলে রক্তের লোহিত কণিকা সময়ের আগেই ভেঙে যায় এবং এর ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। প্রধানত তিন ধরনের থ্যালাসেমিয়া দেখতে পাওয়া যায়—আলফা থ্যালাসেমিয়া, বিটা থ্যালাসেমিয়া ও থ্যালাসেমিয়া মাইনর। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর শরীরে রক্তাল্পতা দেখা যায় এবং বারবার রক্ত পরিবর্তন করতে হয়। ক্রমান্বয়ে বারবার রক্ত নেওয়ায় কিছু জটিলতাও দেখা দেয়। এ ছাড়া যকৃৎ ও প্লীহা বড় হয়ে যায়। বিভিন্ন অঙ্গে আয়রন জমা হতে থাকে।
প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম নেয়। শুধু চিকিৎসার অভাবে ৫০ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি ২০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যায়। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের দুর্বলতা, ক্লান্তি, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, হার্টের সমস্যা এবং শরীরে আয়রন জমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসার বিভিন্ন দিক আছে। এ ধরনের চিকিৎসা গ্রহণে কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করতে হয়।
নিয়মিত রক্ত পরিবর্তন: থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের শরীরে বারবার লোহিত রক্তকণিকার ঘাটতি হতে থাকে। হিমোগ্লোবিন বারবার নেমে যায়। তাই রোগীকে বারবার রক্ত দিতে হতে পারে।
রক্তবাহিত রোগ এড়ানো: সব সময় পরীক্ষিত রক্ত নিতে হবে। কেনা রক্ত বা অপরীক্ষিত রক্ত গ্রহণ করলে নানা ধরনের রক্তবাহিত রোগ দেখা দিতে পারে।
চিলেশন থেরাপি: বারবার রক্ত নেওয়ার কারণে শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমা হতে পারে। এ থেকে বিভিন্ন অঙ্গের অকার্যকারিতা দেখা দিতে পারে। এ জন্য ওষুধ না ব্যবহার করে চিলেশন থেরাপি ব্যবহার করা নিরাপদ।
আয়রনসমৃদ্ধ খাবার: হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজন আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ। অনেকের ধারণা, আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যাবে না। এই ধারণা ভুল।
হাইড্রেশন: থ্যালাসেমিয়া রোগীদের শরীরে যেহেতু রক্তের অভাব থাকে, তাই রোগী যাতে ডিহাইডেট্রেড বা পানিশূন্য না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সংক্রমণ এড়ানো: যাতে কোনোভাবে সংক্রমণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর পরিচ্ছন্ন খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় টিকাগুলো নিতে হবে।
মনোবল রক্ষা: থ্যালাসেমিয়া জীবনব্যাপী রোগ। রক্ত গ্রহণ ছাড়া তেমন কোনো চিকিৎসা এখনো নেই। তাই যে শিশুরা এ রোগ নিয়ে বড় হচ্ছে, তারা মানসিকভাবে যাতে ভেঙে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।