Skip to content

৯ মাস টয়লেটে বন্দী যুবক, যেভাবে মিলল মুক্তি

    ৯ মাস টয়লেটে বন্দী যুবক, যেভাবে মিলল মুক্তি prothomasha.com

    টয়লেটের ছোট্ট খুঁপড়ি দিয়ে ভেসে আসছে মানুষের গুঙ্গানির শব্দ। তিনি এখানে আটকা পড়েননি বরং ভাগ্যের নির্মমতায় এখানে বন্দী হয়ে আছেন প্রায় ৯ মাস ধরে। দম বন্ধ হয়ে আসা ওই কক্ষেই কাটতো তার দিন-রাত। সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তার নামে এমন নির্মমতা নাড়া দিয়েছে সবার মনে। বলছি মানসিক ভারসাম্যহীন সুজিত দাসের কথা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে সোমবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে তাকে এই বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে পুলিশ।

    জানা গেছে, সুজিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কাশিপাড়া এলাকার হরেন্দ্র দাস ও আরতি দাসের ২য় ছেলে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। গত ৮ বছর আগে তাকে বিয়েও করানো হয়। তবে বিয়ের ছয় মাস পর ছেড়ে চলে যায় স্ত্রী। এরপর সে আরও দিশেহারা হয়ে পড়ে। এমনকি তার আঘাতে প্রাণ হারায় আপন চাচাও। তার অস্বাভাবিক আচরণে অনিরাপদ হয়ে পড়ে এলাকার মানুষ।

    এ ব্যাপারে সুজিতের মা আরুতি রাণী দাস বলেন, মা হয়ে সন্তানকে এভাবে আটকে রাখা খুবই যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার। তবুও সামাজিক ও পারিবারিক সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে ওকে প্রায় ৯ মাস আগে ঘরের পেছনের একটি টয়লেটে তালা বন্ধ করে আটক রাখা হয়। আমরা সুজিতের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু সে ওষুধ গ্রহণের ব্যাপারে কোনোভাবেই আগ্রহী নয়। বরং সে বিভিন্ন সময় হিংস্র ও আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠে। তবে তাকে আটকে রাখাকালীন সময়ে তার খাবার ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।

    নাসিরনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুপন নাথ বলেন, সুজিত মানসিক ভারসাম্যহীন। তার পরিবার তাকে টয়লেটে বন্দী রাখে নয় মাস ধরে। স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে তাকে অমানবিক পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের একটি পুনবার্সন কেন্দে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, ৭ থেকে ৮ বছর আগে তিনি তার চাচাকে আঘাত করেন। পরে সেই আঘাতে তার চাচার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর সুজিত জেল খাটে। জেল থেকে বের হয়ে আবার পাগলামি শুরু করে। এতে পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। কাকে কখন আবার আঘাত করে।

    তবে অমানবিক এই ঘটনাকে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় উল্লেখ করে নাসিরনগর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হক বলেন, এ ধরনের অমানবিকতা মনুষত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যারা মানসিক ভারসাম্যহীন বা প্রতিবন্ধী তাদের নিরাপত্তা দিতে পরিবার ও সমাজ দায়বদ্ধ। সুজিতের যে ঘটনাটি তা অমানিবক হয়েছে