Skip to content

ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে পাবনায় কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

    ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে পাবনায় কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম prothomasha.com

    পেঁয়াজের ভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় ২ দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়েছে। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার ২ উপজেলার বিভিন্ন হাটে পাইকারিতে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। গত শনিবার দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি।

    জেলার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় ৫ লাখ ৯ হাজার ৭৮০ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৯৯ হাজার টন পেঁয়াজ খেত থেকে তোলা হয়েছে। বাকি ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৮০ টন পেঁয়াজ আগামী দেড় মাসের মধ্যে কৃষকের ঘরে উঠবে। এদিকে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির খবরে দুই উপজেলার পেঁয়াজচাষিরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, গত দুই থেকে তিন বছরে পেঁয়াজের আবাদ করে লোকসান দিয়েছেন। এবার পেঁয়াজ আবাদে তাঁদের গড়ে ৩৫ টাকা উৎপাদন খরচ হয়েছে। গত বছরের লোকসান পোষাতে হলে এবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ কমপক্ষে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হবে।

    সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, বর্তমানে যে পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠছে, তার উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ৩৪ টাকার কাছাকাছি। এই পেঁয়াজ কৃষকেরা সংরক্ষণ করলে ওজন হ্রাস ও পচনের কারণে উৎপাদন খরচ পড়বে কেজিতে ৪৪ টাকা। তাই পেঁয়াজের দাম এমন হওয়া উচিত, যাতে কৃষকের লোকসান না হয়।

    উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর সুজানগরে ১৭ হাজার ৭১০ হেক্টর ও সাঁথিয়ায় ১৬ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। সুজানগরে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৮০ টন আর সাঁথিয়ায় ১ লাখ ৯১ হাজার টন। গতকাল পর্যন্ত সুজানগরে ৪ হাজার হেক্টর জমি থেকে মোট ৬৮ হাজার টন শুধু হালি পেঁয়াজ তোলা হয়েছে। আর সাঁথিয়ায় ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি থেকে হালি পেঁয়াজ তোলা হয়েছে ৩১ হাজার ৫০ টন।

    সুজানগর ও সাঁথিয়ায় পেঁয়াজের আবাদ হয় দুই পদ্ধতিতে। তার মধ্যে একটি আগাম বা মূলকাটা ও অন্যটি হালি। মূলকাটা পেঁয়াজ জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষকের ঘরে তোলা হয়। এ পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। অন্যদিকে হালি পেঁয়াজ মার্চ-এপ্রিলে ঘরে তোলা হয়। হালি পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।

    গতকাল সরেজমিনে সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাট, বোয়ালমারি ও সুজানগরের চিনাখরা হাট ঘুরে দেখা যায়, প্রচুর পরিমাণে নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন কৃষকেরা। তারপরও তা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কৃষকদের ধারণা, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দাম বাড়তে পারে, এ আশায় স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম পেঁয়াজ হাটে আনছেন কৃষকেরা। ২ দিন আগেও ২ উপজেলার বিভিন্ন হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়।

    বোয়ালমারি হাটে পেঁয়াজ বিক্রির জন্য আসা কৃষক আবদুর রউফ বলেন, ‘এবার দুই বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজের আবাদ করেছি। এর মধ্যে ১ বিঘা জমি থেকে ৪৫ মণের মতো পেঁয়াজ পেয়েছি। তার মধ্য থেকে পাঁচ মণ পেঁয়াজ বিক্রির জন্য এনেছি। বাকি পেঁয়াজ ঘরে রেখেছি।’ এই হাটের আড়তদার রাজা হোসেন বলেন, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে বাজার বাড়তির দিকে। কৃষকেরাও স্বাভাবিকের চাইতে কম পেঁয়াজ হাটে আনছেন। সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম বলেন, এখন বাজারে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তাতে কৃষকের লাভ হচ্ছে। এই দাম ভোক্তারও নাগালের মধ্যে আছে। এর চেয়ে দাম কমলে কৃষকের জন্য তা লাভজনক হবে না।