Skip to content

দেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমছে

    দেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমছে prothomasha.com

    বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমছে। বর্তমানে দেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১৫৩। অর্থাৎ এক লাখ জীবিত সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ১৫৩ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত সপ্তাহে ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২’ প্রকাশ করেছে। এতে সর্বশেষ মাতৃমৃত্যুর হার ও মাতৃমৃত্যুর কারণ তুলে ধরা হয়েছে। গর্ভাবস্থা, প্রসবকাল ও প্রসবের পর ৪২ দিনের মধ্যে মায়ের মৃত্যু হলে তা মাতৃমৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

    অবশ্য বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সুযোগও করে দিয়েছে বিবিএস। সংস্থাটির ২০২১ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৮। এক বছর পর ২০২২ সালে তা হয়েছে ১৫৩। মাতৃস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বছরে মাতৃমৃত্যুর হারের বড় ধরনের তারতম্য দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এত বেশি হারে মাতৃমৃত্যু কমতে দেখা যায়নি।

    কাছাকাছি সময়ে মাতৃমৃত্যুর হারের তথ্যের ভিন্নতাও দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১২৩। একই বছর জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বিশ্ব জনসংখ্যা প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১২৩। অর্থাৎ জাতিসংঘের দুটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বলছে, বাংলাদেশে এক লাখ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ১২৩ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। এখানে জাতিসংঘ ও বিবিএসের তথ্যে পার্থক্য অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।

    মাতৃস্বাস্থ্য ও মাতৃমৃত্যু নিয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের (নিপোর্ট) মাতৃস্বাস্থ্য জরিপের প্রতিবেদন থেকে। সারা দেশের সব জেলার শহর ও গ্রামের তিন লাখের বেশি খানার ওপর জরিপ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সর্বশেষ মাতৃস্বাস্থ্য জরিপ হয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই জরিপে মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৬ পাওয়া গিয়েছিল। সরকার ওই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ স্থগিত করে রেখেছিল দুই বছরের বেশি। প্রাথমিক প্রতিবেদন নিপোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার পর তা আবার সরিয়ে ফেলা হয়। সরকারের বক্তব্য ছিল, জরিপে মাতৃস্বাস্থ্যের বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন হয়নি। বিবিএসের হিসাবে দেশে তখন মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১৭৮। মাতৃস্বাস্থ্য জরিপ ২০১০ ও ২০১৬ সালের প্রতিবেদন পাশাপাশি রাখলে দেখা যায়, মাতৃমৃত্যুর হার কমেনি, বরং বেড়েছিল। ২০১০ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১৯৪ এবং ২০১৬ সালে ছিল ১৯৬। অর্থাৎ মাতৃস্বাস্থ্যের অগ্রগতি দেখা যায়নি।

    নিপোর্টের ২০০১ সালের জরিপে দেশে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ৩২২। এই জরিপের সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গবেষক গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সালের কথা ভুলে গিয়ে মাতৃস্বাস্থ্য জরিপের ধারা অনুসরণ করলে দেশে বর্তমানে মাতৃমৃত্যুর হার ১৫১। তবে বাস্তব অবস্থা জানার জন্য অতি দ্রুত জাতীয়ভাবে মাতৃমৃত্যু জরিপ হওয়া দরকার। তবে গতকাল নিপোর্টের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেছেন, এই জরিপ কবে হবে, তা বলা যাচ্ছে না।প্রশ্ন হচ্ছে সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক বা গবেষকেরা কোন সংখ্যাটি ব্যবহার করবেন। পেশাজীবী সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোলোজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) প্রায় পাঁচ দশক মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতিতে কাজ করছে। ওজিএসবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপাতত আমি বিবিএসের পরিসংখ্যানই ব্যবহার করার পক্ষে। তবে আমি মনে করি, প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য আমাদের আরও আধুনিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’

    মৃত্যুর কারণ ও লক্ষ্যমাত্রা

    বিবিএসের সর্বশেষ প্রতিবেদনে মাতৃমৃত্যুর সাতটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো প্রসবকালে জটিলতা, প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ, গর্ভকালে রক্তক্ষরণ, জটিল গর্ভপাত, গর্ভধারণে জটিলতা, ধনুষ্টংকার ও বিলম্বিত প্রসবে মৃত্যু।

    জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হাতে সময় আছে ছয় বছর।

    অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘আমরা যদি জাতিসংঘের পরিসংখ্যান আমলে নেই তা হলে বাংলাদেশ এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে। আবার বিবিএসের পরিসংখ্যানকে গুরুত্ব দিলে বলতে হবে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ঠিক পথে আছে।’