১৭ বছর ধরে সান মারিনো জাতীয় ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন মাতেও ভিতাইওলি। বর্তমানে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরা ভিতাইওলি জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৯১টি ম্যাচও খেলেছেন। কিন্তু ২০০৭ সালে অভিষেক হওয়া ৩৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার জাতীয় দলের হয়ে এখনো জয়ের দেখা পাননি।সান মারিনোর জয়খরার হিসাবটা যদি ভিতাইওলিকে বাদ দিয়ে করা হয় তবে ম্যাচ না জেতার হিসাবটা হবে ২০ বছরের। এই ২০ বছরে কত কিছু হয়ে গেল! আর্জেন্টিনা ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতল। পেলে–ম্যারাডোনা–বেকেনবাওয়াররা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন অন্যলোকে। রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছে ১৪তম চ্যাাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।কিন্তু এর মধ্যে ১৩৬ ম্যাচ খেলে জয়ের দেখা পায়নি সান মারিনো। নিজেদের ইতিহাসে সান মারিনো অবশ্য জয়ের দেখাই পেয়েছে একবার। ২০০৪ সালের ২৮ এপ্রিল সেই ম্যাচে লিখটেস্টেইনের বিপক্ষে ১–০ গোলে জিতেছিল সান মারিনো। সেদিন সান মারিনোর হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন অ্যান্ডি সিলভা। যিনি ৮ গোল করে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাও।
টানা এই ব্যর্থতা বেশ বেদনাদায়কই বটে! তবে এর সঙ্গে আছে বড় ব্যবধানে হারের ক্ষতও। বিবিসিকে ভিতাইওলি যেমনটা বলছিলেন, ‘সবচেয়ে বাজে স্মৃতি হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১১–০ গোলে হারের ম্যাচটি। ম্যাচে যখন ৮ বা ৯ গোল হয় তখনো খেলার অনেক সময় বাকি। আমার মনে আছে, সমর্থকেরা তখন আরও গোল চেয়ে হর্ষধ্বনি করছিল।’বিশ্বের পঞ্চম ছোট দেশ সান মারিনোকে ঘিরে আছে ইতালি। দেশটির জনসংখ্যাও মাত্র ৩৩ হাজার। এমনকি ৬১ বর্গকিলোমিটার আকৃতির দেশটি আকারে ম্যানচেস্টারের অর্ধেকের মতো। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাকালে দেখা যাবে এটি ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বাজে দল। ২০১টি ম্যাচের মধ্যে ১৯২টি ম্যাচেই হেরেছে তারা। বর্তমানে র্যাঙ্কিংয়ের সবচেয়ে তলানির দেশ হিসেবে ২১০ নম্বরে অবস্থান করছে সান মারিনো। তবে ভিতাইওলি এবং তাঁর দলের সামনে এখন জয়খরা দূর করার দারুণ এক সুযোগ এসেছে। এবার তারা দুটি প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ক্যারিবিয়ান ক্লাব সেন্ট কিটস ও নেভিসের। আজ রাতে প্রথম ম্যাচ খেলার পর তারা দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে ২৪ মার্চ রাতে। সেন্ট কিটস র্যাঙ্কিংয়ে সান মারিনোর চেয়ে ৬৩ ধাপ ওপরে অবস্থান করছে। এরপরও নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারলে জেতার ভালো সুযোগ আছে সান মারিনোর।
এই ম্যাচে নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে অধিনায়ক ভিতাইওলি বলেন, ‘জিতলে নিজ দেশের জাতীয় দলের ইতিহাসের অংশ হতে পারব। তাই এটাই চূড়ান্ত লক্ষ্য। এটা একটা ছাপ রেখে যাওয়ার সুযোগ, যা কখনো মুছে যাবে না। জেতাটা এমন কিছু হবে যা ২০৫০ বা তারপরও মনে রাখা হবে।’ফুটবলের পাশাপাশি ভিতাইওলি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করেন। ফলে দুটি কাজের মধ্যে সমন্বয় করতে হয় তাঁকে। কীভাবে সমন্বয় করেন জানতে চাইলে ভিতাইওলি বলেন, ‘কাজটা জটিল। কিন্তু নিজ দেশের জাতীয় দলের প্রতি ভালোবাসা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। এমন অনেক পেশাদার আছেন, যারা খেলাটা খেলার সুযোগ এবং সম্মান পায় না। এটা আমাদের আত্মত্যাগকে সার্থক করে তোলে।’এরপরও কি কাজটা সহজ? কারণ, সাফল্যের ছিটেফোঁটাও যে কোথাও নেই। দুই দশকের জয়খরা, দুই অঙ্কের গোল খেয়ে হার (সবচেয়ে বড় হার ২০০৬ সালে জার্মানির কাছে ১৩–০ গোলে হারা), র্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে থাকা এবং অদূর ভবিষ্যতে বড় কোনো টুর্নামেন্টে খেলার সম্ভাবনাও নেই।