ঘুম আসতে দেরি হওয়া কিংবা মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। মনের সঙ্গে ঘুমের সম্পর্ক নিবিড়। মনের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে ঘুমও হয় ঠিকঠাক। মানসিকভাবে আপনি যদি পুরোপুরি ঠিক না থাকেন, তবে বাধতে পারে ঘুমের গোলযোগ। হতাশার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। উল্টো দিকে, দীর্ঘদিন ঘুমের সমস্যায় ভোগার কারণেও কিন্তু আপনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন। অর্থাৎ একই সঙ্গে অনিদ্রা ও হতাশায় ভুগতে পারেন আপনি।
এ দুইয়ের মধ্যে কোনটির সূত্রপাত আগে হয়েছে, তা অবশ্য অনেক সময় বোঝা যায় না। তবে সুস্থ থাকতে হলে আপনাকে এই দুই ধরনের সমস্যাকে সামলেই এগোতে হবে। একটির সমাধান হতে থাকলে অন্য সমস্যাটি থেকে বেরিয়ে আসাও সহজ হয়ে উঠতে পারে। যদিও আমাদের জীবনধারাটাই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে হতাশা মোকাবিলা করাটা খুব মুশকিল। শৈশব থেকেই একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা অসম তুলনার ভেতর দিয়ে যাই আমরা। পড়ালেখায় ভালো হতে হবে, পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেতে হবে কিংবা প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে হবে—এমন নানান চাপ শৈশবের নির্মল আনন্দময় সময়টাকে পিষে ফেলতে থাকে। এই ‘দৌড়ে’ সবাই তো আর প্রথম হতে পারে না। প্রথম হতে হবেই–বা কেন? তবে না পারার হতাশা এই সময়টা থেকে অনেকেরই সঙ্গী হয়ে যায়।
কেউ পুরোপুরি শান্তিতে নেই
যে প্রথম হয়, সে–ও কিন্তু চাপেই থাকে! ভালো ফলাফল ধরে রাখার চাপ, বড় পরিসরে ভবিষ্যতে ভালো করার চাপ—স্বস্তি নেই যেন। এই চক্র চলতে থাকে জীবনভর। বড় হওয়ার পর কে ভালো জায়গায় পড়ার সুযোগ পেলেন, কে কেমন চাকরি পেলেন, কে মনের মতো জীবনসঙ্গী পেলেন, কার সন্তান পড়ালেখায় ভালো করতে পারল, ভাবনাচিন্তার বিষয়ের কি আর শেষ আছে! আবার, একটা বিষয়ে অন্যের চোখে যিনি ‘জিতে’ গেলেন, তিনি ব্যক্তিগত জীবনে কী নিয়ে তীব্র হতাশায় ভুগছেন, তা হয়তো কেউ জানে না।
অনিদ্রা ও মনের অসুস্থতা
নানামুখী চাপ আর হতাশার কারণে অনিদ্রা আপনার সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে। আবার যেকোনো কারণে আপনি অনিদ্রায় ভুগলে আপনার মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে অসহায়ত্ব। অনিদ্রাজনিত শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার কারণে জীবন হয়ে উঠতে পারে দুর্বিষহ। ধরুন, অনিদ্রার কারণে আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ছে, কাজেকর্মে মনোযোগ দিতে পারছেন না। আবার, রাতের ঘুমটাকে বাগেও আনতে পারছেন না। দীর্ঘদিন এমনটা চলতে থাকলে আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন কি না, বলুন?
কিছুতেই ঘুম আসছে না, কী করবেন
হতাশা বা অনিদ্রায় ভুগলে জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন। শরীরচর্চা করুন রোজ। নিজের ভালো লাগার কাজে সময় ব্যয় করুন। পরিবারের চাপে আপনি হয়তো পছন্দের পেশাটি বেছে নিতে পারেননি। তাতে কী! অবসর কাটান ভালো লাগার কাজে। বিশ্বস্ত বন্ধুর সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন আপনার কষ্টের কথা। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া যাবে না। অনিদ্রায় ভুগলে বরং সন্ধ্যায় একবার গোসল করে নিতে পারেন। এরপর টেলিভিশন বা স্মার্টফোনে সময় না কাটিয়ে বই পড়ুন। অনিদ্রায় ভুগলেও রোজ নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান, নির্দিষ্ট সময়ে বিছানা ছাড়ুন। রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর মিনিট পনেরোর মধ্যে আর ঘুম আসছে না? পাশের ঘরে গিয়ে আরামসে বসে বই পড়ুন। কেন ঘুম আসছে না, কাল সারা দিন কীভাবে কাজ করবেন, সেসব ভাবনাকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
যখনই হতাশ বোধ করবেন, ইতিবাচক ভাবনা ভাবুন। জীবনের অনিশ্চয়তা এবং চ্যালেঞ্জকে জীবনের অংশ হিসেবেই নিন। নশ্বর পৃথিবীর বুকে ছোট্ট ছোট্ট ভালো কাজ করুন। প্রাণ ও প্রকৃতির জন্য, অসহায় মানুষের জন্য কিছু করুন। আপনার জীবন মূল্যবান। আপনার অবস্থান যেখানেই হোক, পৃথিবীর বুকে আপনি একজনই। আপনার মতো কিন্তু আর কেউ নেই। তাই আপনাকে কারও মতো হতেও হবে না। নিজের জায়গায় নিজেই হয়ে উঠুন উজ্জ্বল।