উদীয়মান ই–কমার্স খাতের বিকাশ ও এ খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে সরকার অবশেষে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের পথে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ জন্য ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তা উঠছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান সংক্রান্ত কমিটি’র বৈঠকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, প্রথমে চিন্তা করা হয়েছিল ডিজিটাল বাণিজ্য আইন করা হবে। পরে ভাবা হয় ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন তৈরির। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, আইনের নাম হবে ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ আইন। আইন পাসের পর গঠন করা হবে কর্তৃপক্ষ।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ থেকে লাইসেন্স নিয়েই দেশে ই–কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। ডিজিটাল কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি (ডিবিআইডি) নিবন্ধন দেবে এ কর্তৃপক্ষ। প্রতারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করলে কর্তৃপক্ষ সেই নিবন্ধন বাতিলও করে দেবে। ডিজিটাল বাণিজ্যে দেশি উদ্যোক্তাদের বাজার সম্প্রসারণ ও রপ্তানি বৃদ্ধি, ডিজিটাল বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অনলাইন কার্যক্রম পরিদর্শন, যে কোনো অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত করা এবং এসব কাজে সহায়তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে পারবে এ কর্তৃপক্ষ।
আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ও স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠকেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ডিজিটাল বাণিজ্য বাণিজ্যেরই অংশ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারেই থাকবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে কারণেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খসড়া তৈরি করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপান্তরের কাজ সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। এখন গড়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ। এ জন্য সব খাতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচলিত বাণিজ্যপদ্ধতি পর্যায়ক্রমে বাণিজ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে। ডিজিটাল বাণিজ্য ঠিকভাবে তদারকি ও পরিচালনার জন্যই দরকার একটা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের। ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই–ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ‘ডিজিটাল বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে খসড়া বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসা করা ছোট ছোট ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিমানার অঙ্কটা বেশি আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আরেকটু যৌক্তিক করা যেতে পারে।’ আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রতারণার অপরাধে মামলা ও জরিমানা করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য বিক্রি করলে অনলাইন বিক্রেতাকে দুই বছরের কারাদণ্ড, অনাদায়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান থাকবে। নির্ধারিত সময়ে পণ্য না দিলে মূল্যের তিন গুণ জরিমানা আরোপ করবে কর্তৃপক্ষ।
আরও বলা হয়েছে, অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল বা গিফট কার্ড, ওয়ালেট, ক্যাশ ভাউচার করলে ছয় মাস কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লটারির আয়োজন করলে দুই বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। আইনের যেকোনো ধারা লঙ্ঘনে দায়ের করা মামলা প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালতে বিচার্য হবে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা-ই থাকুক, বিধিমালায় বর্ণিত সব অপরাধ জামিনযোগ্য হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক সুবর্ণ বড়ুয়া বলেন, আইনের খসড়ায় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের সরল বিশ্বাসের কার্যক্রমকে দায়মুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার কতা বলা হয়েছে। এ রকম দায়মুক্তি তাদের অসদাচরণ, দুর্নীতি বা অনিয়মকে উৎসাহিত করবে বলে তা বাদ দেওয়া যেতে পারে।