জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এক বখাটের বিরুদ্ধে ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানি ও মারধর করার অভিযোগ করেছেন এক গৃহবধূ। এ বিষয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে মামলা রেকর্ড না করে পুলিশ ওই বখাটেকে ছেড়ে দিয়েছে এবং আপসরফা করার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধূ ও তাঁর স্বজনেরা।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ গতকাল রোববার দুপুরে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এতে তিনি বলেন, তাঁর স্বামী মৌসুমি বিভিন্ন ফসলের ব্যবসা করেন; মাসে তিন-চার দিন বাড়ির বাইরে থাকেন। প্রায় দেড় মাস আগে থেকে বখাটে ইদ্রীস আলী কুপ্রস্তাব দিচ্ছিল। এই প্রস্তাবে তিনি (গৃহবধূ) রাজি হননি। তখন ইদ্রীস আলী চাকু দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। তিনি ঘটনাটি তাঁর স্বামী ও স্বজনদের জানান। এ ঘটনায় ইদ্রীসের অভিভাবকেরা তাঁর স্বামীকে হুমকি দেন। গত শনিবার রাতে তাঁর স্বামী প্রতিবেশীর বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। ইদ্রীস আলী রাত সাড়ে দশটার দিকে বাড়িতে ঢুকে তাঁকে জাপটে ধরেন। বাধা দিলে ইদ্রীস আলী তাঁকে কিল-ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে ইদ্রীস আলী তাঁর বাঁ হাতে কামড় দেন। তিনি চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তখন ইদ্রীস আলী ঘরের জানালা ভেঙে পালিয়ে যান।
গৃহবধূর স্বামী অভিযোগ করেন, ওই ঘটনায় গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থানায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী ইদ্রীস আলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ তদন্তের জন্য এএসআই মো. সাজু দায়িত্ব পান। ওই দিন দুপুরে এএসআই সাজু ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি অভিযুক্ত ইদ্রীস আলীর বাড়িতেও যান। ইদ্রীস তখন বাড়িতেই ছিলেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের কাছ থেকে টাকা ঘুষ নেন। গতকাল সন্ধ্যায় গ্রামের লোকজনকে নিয়ে তাঁরা থানায় যান। তাঁরা অভিযুক্ত ইদ্রীস আলী ও তাঁর বাবাকে থানার ভেতর দেখতে পান। ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, ‘অভিযোগ দেওয়ার সময় পুলিশের কথা শুনে খুশি হয়েছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল এখনই পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করবে। এএসআই সাজু অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়িতে যাওয়ার পর সুর পাল্টে গেছে। এখন পুলিশ আপস করতে চাপ দিচ্ছে। আমি আপস করতে চাই না।’
ওই দম্পতির সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় থানায় গিয়েছিলেন তাঁদের প্রতিবেশী রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘গৃহবধূ ও তাঁর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের ৫০-৬০ জন থানায় গিয়েছিলাম। তখন বখাটে ইদ্রীস আলী ও তাঁর স্বজনেরা ওসির কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। আমাদের সঙ্গে ওসি থানা চত্বরে কথা বলেন। তিনি আমাদের আপস করতে বলেছেন। আমরা সময় নিয়ে চলে এসেছি।’ তবে অভিযুক্ত ইদ্রীস আলীর ভাষ্য, ‘গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির ঘটনা সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। পুলিশ আমাকে থানায় আসতে বলেছিল। রোববার সন্ধ্যায় থানায় গিয়েছিলাম। ওসি স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে শাসন করেছেন।’
এএসআই সাজু বলেন, গৃহবধূর অভিযোগটি তদন্ত করতে গিয়েছিলেন। তখন অভিযুক্ত ইদ্রীস আলী বাড়িতে ছিলেন না। সন্ধ্যায় তাঁকে থানায় আসতে বলা হয়েছিল। ওসি স্যার ইদ্রীস আলীকে শাসন করেছেন। এ ঘটনাটি ওসি নিজেই দেখছেন। তিনি বিবাদী পক্ষের কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি। আক্কেলপুর থানার ওসি নয়ন হোসেন বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের লোকজন তাঁরা থানায় এসেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষকে থানায় বসতে বলেছি। বাদীপক্ষ সময় নিয়েছে। যদি বাদীপক্ষ মামলা করতে চায় তাহলে মামলা নেওয়া হবে। বিষয়টি এসপি স্যারকেও জানিয়েছি।’
prothomasha.com
Copy Right 2023