রমজানে বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁয় ইফতারির অন্যতম জনপ্রিয় অনুষঙ্গ হিসেবে পেঁয়াজুর চাহিদাও বেড়ে যায়। আর এই পেঁয়াজু বানানোর অন্যতম উপকরণ হলো খেসারির ডাল। কিন্তু রমজানের আগে সপ্তাহ ব্যবধানেই এই ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।ফলে ভোক্তাদের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে খেসারির ডাল। এর আগে ছোলাসহ অন্যান্য ডালের দামও বেড়েছে, যা কমার সম্ভাবনা কম বলেই জানান ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে মান ভেদে প্রতি কেজি খেসারির ডালের দাম ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। এবার রমজানের বেশ আগেই ছোলার দাম বেড়েছে। অন্যান্য ডালের দামও বেশি। সর্বশেষ ইফতারির পদ পেঁয়াজু বানানোর অন্যতম উপকরণ খেসারির ডালের দামও বাড়ল।
কারওয়ান বাজারের মুদিদোকান লক্ষ্মীপুর স্টোরের স্বত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে পাইকারিতে খেসারির ডালের দাম বাড়তে শুরু করে। খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। যাঁদের কাছে আগের কেনা খেসারির ডাল ছিল, তাঁরা প্রতি কেজি ১১০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছেন। নতুন যাঁরা কিনেছেন, তাঁরা বাড়তি দাম রাখছেন।
আমদানিকারকেরা বলছেন, রোজায় ছোলার চাহিদা যেমন বেশি থাকে, তেমনি খেসারির ডালের চাহিদাও বাড়ে। সে জন্য ব্যবসায়ীদের সাধারণত রোজাকেন্দ্রিক একটি প্রস্তুতি থাকে। কিন্তু ডলারের দাম বেশি থাকায় এবার আমদানি খরচ বেড়েছে। ছোলা ও বিভিন্ন পদের ডালের দামে ডলারের বিনিময় হারের প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, রমজানের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি খরচ বেশি। তাতে বাজার যে অবস্থায় আছে, রমজানের মধ্যেও সেভাবেই থাকবে। নতুন করে আর বাড়বে না। ছোলা ও বিভিন্ন পদের ডালের দাম আপাতত কমার সম্ভাবনা কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত রোববারের বাজারদরের প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১১০ টাকায়। অন্যান্য ডালের মধ্যে প্রতি কেজি মোটা, মাঝারি ও সরু দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি অ্যাঙ্কর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আর মুগ ডালের কেজি পড়ছে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা।
চাহিদানুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় দেশে বছরে বিভিন্ন ধরনের ডাল ও ছোলার মতো ডালজাতীয় পণ্য ১৩-১৪ লাখ টন আমদানি করতে হয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নেপাল থেকে দেশে বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানি করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত থেকেও ডাল আমদানি শুরু হয়েছে। করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত বাজারে ডালজাতীয় পণ্যের দাম মোটামুটি কম ছিল। যুদ্ধের কারণে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এরপর থেকে বাড়তে থাকে। এখনো ডালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।
prothomasha.com
Copy Right 2023