মুঠোফোনে কল দিয়ে প্রথমে হয়তো জানতে চাইবে আপনি ‘ফেমিনিস্ট’ (নারীবাদী) কি না। আবার হয়তো সরাসরি হাজার হাজার ডলার কামানোর প্রস্তাব দেবে। সবই বলবে ইংরেজিতে। কয়েক সেকেন্ড কথা হলেই এগুলো ভুয়া বলে মনে হবে। মুঠোফোন নম্বরে ফিরতি কল দিলে সেটা যাবে না।রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকসহ অন্যান্য মোবাইল অপারেটরের নম্বর থেকে সম্প্রতি এ ধরনের ফোনকল পাচ্ছেন অনেক গ্রাহক।একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রামিসা ইসলামের কাছে একই দিনে দুবার দুটি ভিন্ন টেলিটক নম্বর থেকে এমন ফোনকল আসে। প্রথমবার ইংরেজিতে জানতে চাওয়া হয়, তিনি ফেমিনিস্ট (নারীবাদী) কি না।
রামিসা বলেন, উদ্ভট কল বুঝতে পেরে তিনি কেটে দেন। আরেকটি নম্বর থেকে আবার কল এলে তিনি ইংরেজি জানেন কি না, জানতে চাওয়া হয়। এবারও তিনি কেটে দেন। পরে দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের কাছেই একটি টেলিটক নম্বর থেকে এমন কল আসে। কল ধরলে কোনো কিছু জানতে না চেয়ে সরাসরি ইংরেজিতে একজন বলতে থাকেন, ‘আমার কল করার কারণ হচ্ছে, অনলাইনে এমন চাকরি আছে, যেখানে আপনি দিনে ২ হাজার ডলার আয় করতে পারবেন।’ফোন করা ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলেই কল কেটে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই ফিরতি কল করলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম হাবিবুর রহমানকে ফোন করা হয়। বার্তা পাঠানো হয়। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।মোবাইল অপারেটর রবি নম্বর থেকেও এ ধরনের কল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদেরও একই অভিজ্ঞতা। ইংরেজিতে কথা বলে তাঁদের কাজের লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ধোঁকা দিয়ে (স্পুফিং) প্রতারণা বা হয়রানিমূলক কল করলে প্রযুক্তিগত কারণে অনেক সময় ব্লক করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের কল প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গ্রাহক সচেতনতা।
এ ধরনের কল পাওয়া অন্তত সাতজন বলেন, ডলার কামানোর ‘অফার’ দিয়ে বলা হয়, এ কাজে যুক্ত হতে হলে কিছু নথিপত্র (ডকুমেন্টস) লাগবে। কখনো হয়তো তারা লিংক দেয়।লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদ পেতে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তবে ইদানীং এই ধরনের ফোনকলের সংখ্যা বেড়েছে বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে জানা যায়।বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সচিব মো. নূরুল হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কোনো সংস্থা থেকে সহযোগিতা চাওয়া হলে তাঁরা দেখবেন। পাশাপাশি অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলবেন।
আগেও এ ধরনের চক্র সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগে বেশ কয়েকটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছিল, এতে চীনের কয়েকজন নাগরিকদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।ডিজিটাল ঠগবাজি নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন করতে গিয়ে এই প্রতিবেদক দেখেছেন, প্রতারক চক্র একেক সময় একেক পন্থা অবলম্বন করে। কখনো হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে লিংক পাঠিয়ে, কখনো ই-মেইলের মাধ্যমে তারা প্রতারণার ফাঁদ পাতে।আবার অ্যাপভিত্তিক প্রতারণারও উদাহরণ আছে। গত বছরের আগস্টে মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই) নামে একটি অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন বলে খবর বের হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ঋণ দেওয়ার নাম করে কিছু অ্যাপ দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের (উত্তর বিভাগ) অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ প্রায়ই আসে। তাঁরা ব্যবস্থাও নিয়ে থাকেন। তারা মূলত চীনা প্রতারক দলের অংশ। তারা দেশে-বিদেশে মিলিয়ে কাজ করে। বিদেশিদের দিয়ে তারা কল করিয়ে থাকে।ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতারক চক্র বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রথমে কিছু অর্থ ব্যয় করে। এরপর ব্যক্তিকে আস্থায় এনে প্রতারণা শুরু করে সরে যায়।
prothomasha.com
Copy Right 2023