মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজে আগামীকাল বুধবার কক্সবাজার শহরে ফিরছেন বাংলাদেশের ১৫৩ নাগরিক। তাঁদের অনেকে দেড় থেকে দুই বছর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিথুয়ের (আকিয়াব) কারাগারে বন্দী ছিলেন। তাঁদের কেউ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে, কেউ সীমান্ত অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার হন। বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতায় আটকে পড়া ১৫৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। ১৫৩ জনের মধ্যে অন্তত ১০৯ জন কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা। তাঁদের বেশির ভাগ জেলে। অবশিষ্ট ৪৪ জনের বাড়ি বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, নরসিংদী, নীলফামারী, রাজবাড়ীসহ আট জেলায়।
পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আগামীকাল সকাল ১০টার দিকে ১৫৩ বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে আসা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজটি কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনা বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে ভিড়বে। সেখানে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে ১৫৩ জনকে হস্তান্তর করা হবে। বেলা একটার দিকে জাহাজে আসা মিয়ানমার প্রতিনিধিদলটি সড়কপথে যাবেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে। সেখানে সম্প্রতি কয়েক দফায় সীমান্ত ও নাফ নদী অতিক্রম করে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ২৮৫ জন সীমান্তরক্ষী বিজিপি ও সেনাসদস্যদের সঙ্গে কথা বলবে তারা। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে একই জাহাজে ২৮৫ জনকে ফেরত নেওয়া হবে সিথুয়েতে। বাংলাদেশিদের গ্রহণের সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস বলেন, বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ জেটিতে বাংলাদেশিদের গ্রহণের পর প্রথমে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, খাবার পরিবেশন ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হবে। তারপর বেলা একটা নাগাদ তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ইতিমধ্যে পরিবারগুলোকে খবর দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের জেলেপল্লিতে গিয়ে দেখা গেছে, বেশ কিছু পরিবারের মানুষের মুখে আনন্দ-উল্লাস, আবার কিছু পরিবারে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা। নাফ নদীর তীরে জালিয়াপাড়ার অবস্থান। নদীভাঙনের কারণে কয়েক বছরে গ্রামটির প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। পরিবারগুলো বেড়িবাঁধের বাইরে (পশ্চিমে) ঝুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস করছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চলমান সংঘাত-লড়াই পরিস্থিতিতে জেলেরা নাফ নদীতে মাছ ধরতে পারছেন না।
জালিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছামাত্র বেশ কিছু নারী-পুরুষ এই প্রতিবেদককে ঘিরে ধরেন। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর জানতে চান—মিয়ানমারের জাহাজে তাঁদের স্বজনেরা আছেন কি না? কেউ কেউ স্বজনদের ছবি দেখাতে থাকেন। ছেলে মহিউদ্দিনের ছবি তুলে ধরে বিলাপের সুরে মা হাজেরা খাতুন (৫৪) বলেন, ‘মর পোয়ারে তোয়ারা আনি দ না বাজি। পোয়া ন আইলে আইঁ মরি যাইয়্যুম দে…’ (আমার ছেলেকে তোমরা এনে দাও, নইলে আমি মরে যাব)।
আরেকটি ঝুপড়ি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহজাহান বেগম। হাতে ছেলে মো. আকবরের ছবি। হাসিমুখে মা বলেন, দুই বছর ধরে ছেলে সিথুয়ের কারাগারে বন্দী ছিল। গতকাল সোমবার বিকেলে ছেলে মুঠোফোনে তাঁকে জানান, কারাগার থেকে তাঁরা কয়েকজনকে আলাদা করে রাখা হয়েছে বাংলাদেশে আনার জন্য। এ খবরে মায়ের মনে খুশির বন্যা বইছে।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ১৫৩ জনের তালিকায় ১৪৪ জনের ছবি যুক্ত রয়েছে, অপর ৯ জনের ছবি নেই। ১৫৩ জনের মধ্যে ১০৯ জনের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ, সদর, রামু ও মহেশখালীতে। অবশিষ্ট ৪৪ জনের বাড়ি তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের আট জেলায়।
prothomasha.com
Copy Right 2023