মানুষের গর্ভাশয়ে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা বা মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে কি না, এ নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। সেই গবেষণায় অংশ নেওয়া সবার গর্ভাশয়ে মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এতে করে গবেষকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। তাদের মতে, প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র কণা গর্ভাশয়ে থাকা ভ্রুণের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ভ্রূণের বিকাশে সমর্থন করা এমন ৬২ প্ল্যাসেন্টাল টিস্যুর নমুনা পরীক্ষা করেছে গবেষকরা। সবগুলো টিস্যুর মধ্যে প্লাস্টিক ব্যাগ ও বোতল তৈরিতে ব্যবহৃত পলিথিন পাওয়া গেছে। আরেকটি গবেষণায় ১৭টি মানব ধমনীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছে গবেষকরা। ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণাগুলো রক্তনালীতে জমাট বাঁধার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে, মানব শরীরের রক্তে ও মায়ের দুধে মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছিল গবেষকরা। শরীরের প্রতিটি অংশেই এর অস্তিত্ব রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা মানব শরীরে কতটুকু প্রভাব ফেলে তা এখনও জানা যায়নি। তবে, গবেষণাগারে দেখা গেছে, মানব কোষের ক্ষতি করতে পারে প্লাস্টিক। কণাগুলো টিস্যুতে জমা হতে পারে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
একসময়ের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার প্লাস্টিক এখন পরিবেশ দূষণ নামের দুঃস্বপ্নের শামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে ফেলা হয়। গোটা বিশ্বকে দূষিত করে ফেলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্খ এভারেস্ট থেকে শুরু করে গভীর সমুদ্রেও মিলেছে প্লাস্টিকের কণা। খাবার, পানি ও শ্বাস নেওয়ার সময় প্লাস্টিক মানুষের দেহে প্রবেশ করে। মানুষের মলে প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র কণার অস্তিত্ব মিলেছে।
গর্ভাশয়ে প্লাস্টিকের কণা রয়েছে কি না, এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোর অধ্যাপক ম্যাথু ক্যাম্পেন। তিনি বলেন, ‘যদি প্লাস্টিকের কণা প্ল্যাসেন্টাল টিস্যুতে প্রভাব ফেলতে পারে, সেহেতু এটি গ্রহের সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর জীবনকে প্রভাবিত করতে পারবে। বিষয়টি আমাদের জন্য সুখকর নয়।’
এই গবেষক আরও বলেন, ‘মানব কোষে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান ঘনত্ব কিছু স্বাস্থ্য সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে পেটের প্রদাহজনিত রোগ। এ ছাড়া ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়। পাশাপাশি শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস করতে পারে।’
২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, পেটের প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মলে ৫০ শতাংশের বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। ক্যাম্পেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’টক্সিকোলজিক্যাল সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পরীক্ষা করা সমস্ত নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। যার ঘনত্ব প্রতি গ্রাম টিস্যুতে ছয় দশমিক পাঁচ থেকে ৭৯০ মাইক্রোগ্রাম।