বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনকে (৫০) হত্যার পর ফ্রিজে রাখার অভিযোগে তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে (১৯) গ্রেপ্তার করে র্যাব। তবে পুলিশের তদন্তে মোড় নেয় ঘটনায়। পুলিশ বলেছে, তার ছেলে নয়, বাড়ির ভাড়াটিয়াই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সাদ বিন আজিজুর রহমানকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, র্যাবের তদন্তে যদি কারও গাফিলতি থাকে বা তথ্যগত, প্রক্রিয়াগত ভুল থাকে, এর সঙ্গে র্যাবের কেউ যদি দায়ী হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) কাওরান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজিমপুরে শিশু অপহরণের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বগুড়ায় এক নারীকে খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে প্রথমে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। ওই ঘটনার তদন্তে পুলিশ সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছে। যেখানে তার ছেলে নয় তিন ভাড়াটিয়া জড়িত বলে উঠে আসে। অথচ ছেলে নিরীহ হলে বিচারের আগেই মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হলেন।
এ ঘটনায় র্যাবের বক্তব্য জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, ‘বগুড়ার ধুপচাঁচিয়ার ঘটনায় ছেলে জবানবন্দি দিয়েছে। সে তথ্য আমরা রেকর্ড করেছি। তাকে যখন ক্যাম্পে আনা হয়, তখন তার আত্মীয় স্বজনরা ছিলেন। ছেলের দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতেই র্যাব কাজ করেছে।’
তিনি বলেন, তদন্তে ভিন্নতা হতেই পারে। ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও তদন্ত করছে। পুলিশ তদন্তে যদি র্যাবের সহযোগিতা নেবার প্রয়োজন মনে করে আমরা করবো।
দুই সংস্থার তদন্তে ভিন্নতা কেন? আদালতে অস্বীকার করায় রিমান্ডে নিতে হয়েছে। এখনো রহস্যই উদঘাটিত হলো না, কিন্তু ছেলে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হলেন।
এ ব্যাপারে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, স্বীকারোক্তি অনেক ধরনের আছে। কেউ কোনো ঘটনায় স্বীকারোক্তি দেওয়া মানেই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে না। আবার যিনি স্বীকারোক্তি দেবেন তিনি যেকোনো সময় তার বক্তব্য অস্বীকার, পরিবর্তন, পরিমার্জন করতে পারবেন। এটা তা আইনগত অধিকার। ১৬৪, ১৬১ আলাদা। এখানে র্যাবের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তবুও ঘটনায় তদন্তে গাফিলতি তদন্ত করে দেখা হবে।
মিডিয়া ব্রিফিং সচেতনতামূলক কাজ। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। ব্রিফিং নিবারণমূলক কাজের অংশ। মানুষ যাতে শিক্ষা নেয় বা সচেতন হয়। এখানে পুলিশের তদন্ত ভুল সেটার সুযোগ নেই। ঘটনার আরও অধিকতর তদন্ত হবে। তদন্ত কিন্তু শেষ হয়নি।
রোববার (১১ নভেম্বর) দুপুরে দুপচাঁচিয়ার জয়পুরপাড়া এলাকায় ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’ নামে চারতলা বাড়ি থেকে সালমা খাতুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সোমবার রাতে কাহালু উপজেলার আড়োবাড়ি গ্রাম থেকে তার ছেলে সাদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ‘হাতখরচের টাকা না পেয়ে মাকে তার ছেলে হত্যা করে লাশ ফ্রিজে রেখেছিল’ বলে র্যাব যে তথ্য দেয়, রিমান্ডে তার উল্টো তথ্য দেন সাদ। সেই সঙ্গে ফাঁসানোর কথা বলেন তিনি। ওই তথ্যের বরাত দিয়ে ঘটনায় জড়িত তিন জনকে গ্রেপ্তার করে এখন পুলিশ বলছে, ছেলে নয়, বাড়ির ভাড়াটিয়ারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
গ্রেপ্তার তিন জন হলো– দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের ইসলামপুর উত্তর সাজাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া সুলতানা হাসি (৪১), গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়ার আবদুর রহিমের ছেলে মোসলেম উদ্দিন (২৮) ও তালুচ বাজার এলাকার নারায়ণ রবিদাসের ছেলে সুমন রবিদাস (৩০)।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে দুপচাঁচিয়া থানার পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া মোবাইল ও ওয়াইফাই রাউটারের সূত্র ধরে বাসার ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
prothomasha.com
Copy Right 2023