মরণব্যাধি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে গবেষণা সংস্থাগুলো। ক্যানসারপ্রতিরোধী ওষুধ তৈরিতে মহাকাশেও গবেষণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এ গবেষণা করছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাসার কর্মকর্তারা মহাকাশের ওজনহীন পরিবেশে ক্যানসার গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা বলেছেন।
ওয়াশিংটনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে নাসার নভোচারী ফ্র্যাঙ্ক রুবিও বলেন, ‘গবেষণা পরিচালনার জন্য অনন্য একটি জায়গা হচ্ছে মহাকাশ।’পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সাম্প্রতিক এক মিশনে ক্যানসার নিয়ে গবেষণা চালান ৪৮ বছর বয়সী পদার্থবিদ ও সাবেক সামরিক হেলিকপ্টার চালক ফ্র্যাঙ্ক।মহাকাশে গবেষণা করার সুবিধা হলো, সেখানকার ওজনহীন পরিবেশে দ্রুত কোষের বয়স বাড়ে। এতে গবেষণার গতি বেড়ে যায়। এ ছাড়া কোষের খাঁটি গঠন কাঠামোও বিশ্লেষণ করতে পারেন গবেষকেরা।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাসার প্রধান বিল নেলসন বলেন, পৃথিবীর তুলনায় মহাকাশে কোষের আণবিক গঠন আরও ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা সুযোগ তৈরি হয়। ফলে মহাকাশে পরিচালিত গবেষণা ক্যানসারের ওষুধকে আরও কার্যকর করতে সাহায্য করতে পারে।যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি মার্ক তাদের শিরায় দেওয়া ক্যানসারের ওষুধ কিট্রুডা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে একটি গবেষণা চালায়। এর মূল উপাদানটিকে তরলে রূপান্তর করা কঠিন। এর সমাধান হলো স্ফটিকীকরণ (ক্রিস্টালাইজেশন)। ওষুধ তৈরিতে প্রায় এ প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
এর আগে ২০১৭ সালে মার্ক পৃথক একটি গবেষণা চালিয়েছিল, যাতে পৃথিবীর তুলনায় মহাকাশে দ্রুত ক্রিস্টাল তৈরি হয় কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। নেলসন বলেন, মহাকাশে গবেষণা চালিয়ে তাঁরা এবার ভালো ফল পেয়েছেন।গবেষকেরা বলছেন, এ গবেষণার ফলে ক্যানসারের রোগীদের এখন আর দীর্ঘ সময় ধরে কষ্টকর কেমোথেরাপি দিতে হবে না। চিকিৎসকেরা ইনজেকশনের মাধ্যমেই ওষুধ প্রয়োগ করতে পারবেন।মার্ক এখন এমন একটি ওষুধ তৈরি করতে কাজ করছে, যা সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে। তবে মহাকাশে গবেষণালব্ধ এই ফল প্রয়োগ করে ওষুধ তৈরির পর তা বাজারে ছাড়তে এখনো অনেক সময় লাগবে।
নেলসন বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক সিনেটর। তিনি ১৯৮৬ সালে মহাকাশেও গেছেন। তিনি বলেন, চার দশক আগে মহাকাশে ক্যানসার গবেষণা শুরু হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বৈপ্লবিক অগ্রগতি হয়েছে।২০১৬ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বাইডেন ‘ক্যানসার মুনশট’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। তাঁর এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ক্যানসারে মৃত্যুর হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা। যুক্তরাষ্ট্রে হৃদ্রোগের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ক্যানসারে। বাইডেনের জন্য ক্যানসারকে পরাজিত করার একটি ব্যক্তিগত লড়াই। ২০১৫ সালে তিনি মস্তিষ্কের ক্যানসারে আক্রান্ত তাঁর ছেলে বিউ বাইডেনকে হারিয়েছেন।
prothomasha.com
Copy Right 2023