বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সরব ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মা প্রকাশ করে নেমেছেন রাজপথেও। সকল বাঁধা-বিপত্তিকে পেছনে ফেলে তিনি এগিয়ে গেছেন নিজের মতো করে।এদিকে, বাংলাদেশের এই গণ-আন্দোলনের উপর সজাগ দৃষ্টি ছিল ভারতের। ইতিমধ্যেই তারা কথা রটিয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে! এসব বিষয় নিয়ে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন বাঁধন। জবাব দিয়েছেন তাদের নানা প্রশ্নের।
বাঁধনের কাছে জানতে চাওয়া হয়; সরকার পতন পর সহিংসতার বিষয়ে। জবাবে রেহানা মারিয়াম নূর’খ্যাত এই অভিনেত্রী বলেন, ‘যে সহিংসতা হচ্ছে তা ঘৃণিত অপরাধ। বাংলাদেশে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ আছে। তারা যে কোনো পরিস্থিতি নিজেদের লাভের জন্য ব্যবহার করে। যেসব ঘটনার কথা আপনি বলছেন, এই নৈরাজ্য তো গত ১৫ বছর ধরেই বিচ্ছিন্নভাবে চলছিল। মানুষের ওপর নিপীড়ন চলছিল। যেভাবে প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে, সবাইকে ফেলে চলে গেছেন। এ কারণে গত দু’দিন ধরে পুলিশের কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট আমরা পাচ্ছি না। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকেও কোনো দিকনির্দেশনা পাচ্ছি না। এখন আমি অভিনন্দন জানাতে চাই ছাত্র-জনতাকে যারা আন্দোলনটা সফল করেছেন। তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই, যারা আন্দোলনের মধ্যেদিয়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কিন্তু আমাদের সবার। বঙ্গবন্ধু কিন্তু কোনো দলের নয়। কারো একার বাবা নন, ওনি আমাদের জাতির পিতা। ওনি আমাদের দেশকে স্বাধীন করেছেন, ওনাকে আমরা সবাই শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি। কিন্তু আজকে ওনাকে যারা অপমান করেছে, তাদের প্রতি আমি ঘৃণা জানাই। সঙ্গে এও বলতে চাই, আজকে ওনার অপমানিত হওয়ার পেছনে কিন্তু ওনার দুই সন্তানই দায়ী। তাকে এই অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন তার দুই মেয়ে, যে কারণে মানুষ এত ক্রোধ ও এত ক্ষোভ।’
জলের গানের গায়ক রাহুল আনন্দের বাড়িতে আগুন দেওয়া প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘রাহুল দা আমাদের প্রাণের মানুষ। আমরা কিন্তু তাকে ভালোবাসি। যারা এই সুযোগ সন্ধানী মানুষ, যারা আসলে এই সাম্প্রদায়িক হামলাকে উসকানি দিতে চায়। যারা আসলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে এভাবে তুলে ধরতে চায় যে- এখানে সাম্প্রদায়িক বেশি সহিংসতা হয়। তাদের এই ইচ্ছাটা তারা হয়ত কোনোভাবে পূরণ করেছে। এটার ঘটনার জন্য আমরা লজ্জিত আর অবশ্যই অবশ্যই রাহুল দার প্রতি ক্ষমাপ্রার্থী।’
উপস্থাপক যখন জানতে চান, এরা কারা? জবাবে বাঁধন বলেন, ‘গত ১৫ বছরে নৈরাজ্য সবচেয়ে বেশি করেছে আওয়ামী লীগ। তারা যেভাবে মানুষকে জুলুম করেছে। যেভাবে মানুষের মুখ চেপে ধরা হয়েছে, তা লজ্জাজনক। তিনি যেভাবে আমাদের ফেলে চলে গেলেন, তার মতো লিডারের কাছে আমরা আশা করিনি। তিনি দেশে থাকতেন, ফেস করতেন, তার বিচার হত!’দেশটির গণমাধ্যমে আসা ছবি তুলে ধরে সঞ্চালক সেসব নিয়ে জানতে চাইলে বাঁধন বলেন, ‘কিছু গণমাধ্যম বাদে আমাদের বেশিরভাগ গণমাধ্যমের ওপর আমাদের আস্থা নেই।’
সঞ্চালক প্রশ্ন করেন গণমাধ্যম, সরকার, সংবিধান কোনো কিছুতেই আস্থা নেই, তাহলে আস্থাটা কোথায়? জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আস্থা জনগণের ওপর। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমাদের এই অনাস্থা থেকে আজকের ঘটনা। একটা ছোট কোটা আন্দোলন থেকে এই ঘটনা ঘটেনি। কীভাবে পুলিশের গুলিতে ছাত্র মারা গেছে, বাবার কোলে শিশু মারা গেছে। সেসব দেখে সাধারণ মানুষের ভয় কেটে গেছে।’আশাবাদ ব্যক্ত করে বাঁধন বলেন, ‘যাদের আমরা মান্য করি, এরকম কিছু মানুষকে নিয়ে আমরা সংস্কার করছি। আমরা ছাত্রদের সঙ্গে থাকতে চাই।’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে মানুষ আর মানুষ থাকে না। কারণ গুলিতে এতগুলো প্রাণ যাওয়ার পরও তাদের জন্য সরকারের খারাপ লাগেনি, বরং কতগুলো স্থাপনার জন্য তারা কান্নাকাটি করেছে। অথচ আমাদের ট্যাক্সের টাকায় ওসব আবার করা যেত। এই ঘটনা বলে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে সাধারণ জনগণের সঙ্গে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে সরকারের। তিনি একা নন, তিনি যাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন তারাও সে রকম হয়ে গেছেন, মানুষকে মানুষ বলেই গণ্য করেননি তারা।’
prothomasha.com
Copy Right 2023