শিক্ষা কিংবা সমাজসেবা কর্মকর্তার নম্বর ক্লোন (অনুরূপ নম্বর তৈরি) করেন ইসমাইল মাতুব্বর ও সুমন ইসলাম। সরকারি ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করেন বিভিন্ন উপবৃত্তি ও ভাতা গ্রহীতার মোবাইল ফোন নম্বর। সেগুলোতে কল দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দেন। বৃত্তি বা ভাতার টাকা পাঠানোর কথা বলে জেনে নেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট থাকা নম্বরের পিন, ওটিপির মতো গোপন তথ্যগুলো।
এরপর ওই অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে যায়। এমনকি যখনই সংশ্লিষ্ট হিসাবে টাকা প্রবেশ করে তখনই তুলে নেন তারা। এসব কাজে সহায়তা করতেন সুদক্ষ কয়েকজন সদস্য। তাদের ফাঁদে পড়ে অর্থ খোয়াচ্ছেন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের এজেন্টরাও। মঙ্গলবার এই চক্রের হোতাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– কক্সবাজারের বাসিন্দা ও চক্রের হোতা ইসমাইল ও তার ছোট ভাই ইব্রাহীম মাতুব্বর, তাদের সহযোগী মানিক ওরফে মতিউর রহমান এবং সিনবাদ হোসেন। একই কর্মে লিপ্ত অপর চক্রের হোতা ও কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা সুমন ইসলাম, তাঁর সহযোগী মাহমুদুল হাসান পলক, সাব্বির খন্দকার, মো. সাকিব এবং রাসেল তালুকদার। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০। তাদের কাছ থেকে ৩৬টি মোবাইল ফোন, ১২৬টি সিমকার্ড, ১০৪টি ইয়াবা ও নগদ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, কক্সবাজারের পেকুয়ার বাসিন্দা ইসতাহাদ উদ্দিন সোহানের মোবাইল ফোন নম্বরে গত ২২ মার্চ কল দিয়ে তাঁর নম্বরে উপবৃত্তির টাকা পাঠানোর কথা বলে কৌশলে বিকাশের পিন নম্বর নেয় প্রতারক চক্র। পরে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৮ হাজার টাকা সরিয়ে নেয়। এ ঘটনায় তিনি পেকুয়া থানায় জিডি করেন। এর দু-দিন পর একই এলাকার আরেক শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসের ২০ হাজার এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীর লোকমান হোসেনের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি আবদুল মোমিন নামে এক ব্যক্তি ৪২ হাজার ৭৭৭ টাকা খোয়ান। পরে তিনি ডেমরা থানায় জিডি করেন। অনেক সময় প্রতারণার বিষয়টি বোঝাও কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, যারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নম্বর জানেন তারাও বিষয়টি ধরতে পারেন না এ জন্য যে, নম্বরটি হুবহু মিলে যায়।
র্যাব কর্মকর্তা ফরিদ বলেন, প্রতারকরা অন্তত দু’বছর ধরে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে আসছিল। তারা এক বছরেই ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে। তাদের হাত থেকে রেহাই পাননি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের এজেন্টরাও। তাদের হাজারে ৪ টাকার পরিবর্তে ৮-১০ টাকা লাভ করার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নামে গোপন নম্বর হাতিয়ে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে এজেন্টদের কাছে বিশ্বস্ত হওয়ার জন্য তাদের সার্ভিস রিপ্রেজেনটেটিভের (এসআর) ফোন নম্বর ক্লোন করা হতো। গ্রেপ্তার প্রতারকদের থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
prothomasha.com
Copy Right 2023