সরকারি প্রকল্পের কেনাকাটায় স্বচ্ছতা বাড়াতে ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট বা ই-জিপি পদ্ধতিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও দেখা যায়, কিছু নিয়মকানুনের কারণে বড় প্রকল্পগুলোতে নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানই বারবার কাজ পায়। এতে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। গণ খাতে ক্রয় আইনের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। সেমিনারটির আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)। গতকাল রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আইবিএফবি কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, গণ খাতের কেনাকাটাকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে নতুনদের জায়গা করে দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে দরপত্রে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ পেতে আইনে থাকা ‘অন্যায্য ধারাগুলো’ সরানোর প্রস্তাব দেন তাঁরা। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, সরকার প্রাথমিক পর্যায়ের ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ইলেকট্রনিক ক্রয়পদ্ধতি চালু করেছে। তারপরও বিভিন্ন অনিয়ম হয়ে থাকতে পারে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান ক্রয়বিশেষজ্ঞ জাফরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে ৭০ শতাংশ সরকারি প্রকল্পের কাজ সময়মতো সম্পন্ন হয় না। এতে প্রকল্পের ব্যয় বহুগুণে বৃদ্ধি পায়; সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টাও বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে ক্রয় প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় বলে জানান তিনি। আইবিএফবির সভাপতি হুমায়ুন রশীদ বলেন, ‘দেশে ব্যবসায়ের প্রক্রিয়া সহজীকরণ না হওয়ায় এবং দুর্নীতির কারণে আমরা প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছি।’
বৈষম্য বৃদ্ধির অভিযোগ
সরকারি কেনাকাটা–সংক্রান্ত দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সরকারি কেনাকাটায় ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে। তা সত্ত্বেও দেখা যায়, বড় প্রকল্পগুলোতে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানই বারবার কাজ পায়। শুধু নিম্নদর দেখে কাউকে কাজ দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন নির্মাণ খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) উপদেষ্টা এস এম খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ১০০ কোটি টাকার কাজ কেউ ৬০ কোটি টাকায় করে দিতে চাইলে প্রশ্ন ছাড়া তা পাস করে দেওয়া হয়। এটা ঠিক নয়।
দরপত্রের ক্ষেত্রে ১৮ মাস পরপর রেট শিডিউল পরিবর্তনের নিয়ম রয়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর ট্রান্সফরমার অ্যান্ড সুইচগিয়ারের (এমএটিএস) সাবেক সভাপতি রবিউল আলম। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বিদেশি ঠিকাদারদেরক্ষেত্রে কর–ভ্যাটে নানা ধরনের ছাড় দেওয়া হয়। এ কারণে একদিকে কর–জিডিপির অনুপাত বাড়ছে না; অন্যদিকে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
আইবিএফবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এস সিদ্দিকী বলেন, এমনভাবে পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে যে কিছু লোক বারবার কাজ পায়। এভাবে চললে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বেঁচে থাকবে না। বাংলাদেশে দরপত্রের প্রক্রিয়াকে প্রতিযোগিতামূলক করা গেলে ৪০ শতাংশ অর্থ খরচ কমানো সম্ভব। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট কর্তৃপক্ষের (বিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শোহেলের রহমান চৌধুরী বলেন, কম দরে দরপত্র পাওয়া এবং প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতা রয়েছে। তবে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়মও বিধিতে আছে। এ ছাড়া নতুনদের সুবিধা বৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে গণ খাতে ক্রয় আইনে কিছু সংস্কার আনার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
গণ খাতে কেনাকাটা
আইবিএফবি আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেন, গণ খাতের কেনাকাটাকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে।
prothomasha.com
Copy Right 2023