জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার স্মরণে তাঁর ছবিসহ আঁকা গ্রাফিতির ওপর নির্দেশিকা বোর্ড বসানো হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালে বোর্ডটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।গতকাল রোববার সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অবন্তিকার ছবিসহ আঁকা গ্রাফিতির সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেটির ওপরে একটি নির্দেশিকা বোর্ড বসানো আছে। এতে ওই ভবনের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া। ওই বোর্ড বসানোয় ঢেকে গেছে পুরো গ্রাফিতি।শুধু তা–ই নয়, গ্রাফিতির ওপর বসানো নির্দেশিকা বোর্ডে একাধিক বিভাগ ও দপ্তরের নামে ভুল রয়েছে। এ ছাড়া বোর্ডে ব্যবহার করা নির্দেশিকা চিহ্নেও ভুল করা হয়েছে।
বিষয়টি নজরে আসার পর গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে আসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় তাঁরা বলেন, অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছিল। এতে লেখা হয়েছিল, ‘আমরা চাই না ভুয়ো মান, হতে চাই না শিরোনাম।’ এটি ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ গানের দলের একটি গানের লাইন। সত্তর দশকের গানের দল ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি নিয়ে সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ওই সময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তৌকির আহমেদ বলেছিলেন, ‘অবন্তিকাসহ অন্যদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদে এ আয়োজন। কিছুদিন পর সবাই তাঁদের ভুলে যাবে। তাই স্মৃতি রক্ষার জন্য তাঁদের প্রতিফলক ক্যাম্পাসে স্থায়ীভাবে স্থাপনের জন্য উপাচার্যের কাছে দাবি জানিয়েছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবন্তিকার এ গ্রাফিতির মাধ্যমে তাঁদের স্মরণ করার চেষ্টা করা হবে।’
অবন্তিকার স্মরণে আঁকা ওই গ্রাফিতির ওপর নির্দেশিকা বসানোর প্রতিবাদে গতকাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে যান তৌকির আহমেদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় তৌকির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাধিক বিকল্প জায়গা থাকার পরও গ্রাফিতির ওপর নির্দেশিকা বোর্ড লাগানো হয়েছে। আবার সেই বোর্ড ভুলে ভরা। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা আর দায়িত্বহীনতার পরিচয় এটা। এ বোর্ড সরিয়ে ফেলার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।’
পরে নির্দেশিকা বোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আজ সোমবার সেখানে গিয়ে আর বোর্ডটি দেখা যায়নি।এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা জানানোর পর ওই নির্দেশিকা বোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
গত ১৫ মার্চ রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লায় নিজের বাসায় রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। তাঁর কয়েকজন বন্ধু বলেন, তিনি ফেসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের নিপীড়নের অভিযোগ করেন। ওই পোস্টে একজন সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে ছেলেটির পক্ষ নিয়ে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও করেছেন তিনি।
অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তাঁর সহপাঠীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি তাঁকে সহায়তা করার অভিযোগে এক সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে তাঁর মায়ের করা মামলায় এই দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই শিক্ষক বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন।
prothomasha.com
Copy Right 2023