ভারতের ইতিহাসে অনন্য উদাহরণ রচনা করলেন নরেন্দ্র মোদি। টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গতকাল শপথ নিয়েছেন এই বিজেপি নেতা। রবিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি দৌপদী মুর্মু। এর মধ্য দিয়ে মোদি সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সারিতে নিজের নাম লেখালেন।
এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মোদির নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় ৭২ মন্ত্রী গতকাল শপথ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০ জন মন্ত্রিসভার পূর্ণমন্ত্রী। অপর ৪১ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে পাঁচজন দপ্তরবিহীন বা স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত। মন্ত্রীরা কে কোন দায়িত্ব পাচ্ছেন, তা গতকাল ঘোষণা করা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের দুজন বিজেপি সংসদ সদস্য (এমপি) প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। আর সংসদের কোনো কক্ষে সদস্য না হয়েও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন বিজেপির দুই নেতা।
দশ বছর পর জোট সরকার গঠন করতে বাধ্য হতে হলো বিজেপিকে, কারণ এবার নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি দলটি। মোদির প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারে জোটের সহযোগী দলগুলো থেকে যথাক্রমে পাঁচ ও চারজন এমপি মন্ত্রিত্বপেয়েছিলেন। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে।অন্যদিকে এক দশক পর সংসদের নিম্নকক্ষ তথা লোকসভায় বিরোধী দল পাচ্ছে ভারত। মোদির শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীরা এ শপথানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও তারই নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার গঠন করে। এবারের নির্বাচনে মোদির দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে বেশি আসনে জয় পায়।
এবারের মন্ত্রিসভায় বেশ কয়েকজন নতুন মুখ রয়েছে। আবার আগের কয়েকজন মন্ত্রী নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় নেই। বিজেপি এবার পাঁচজন পূর্ণমন্ত্রী ও ছয়জন প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়েছে জোটের শরিক দলগুলোর জন্য। তবে অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপির কোনো এমপি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেননি।আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে সরাসরি প্রচারিত সংবাদে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় মোদি শপথ নেওয়ার সময় দর্শকাসন থেকে ‘মোদি মোদি’ ও ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান শোনা যায়।
এবার ৩০ পূর্ণমন্ত্রীর মধ্যে বিজেপির ২৫ জন। মোদি ছাড়া অন্যরা হলেন : অমিত শাহ, ড. এস জয়শঙ্কর, রাজনাথ সিংহ, নির্মলা সীতারমণ, জেপি নাড্ডা, অশ্বিনী বৈষ্ণো, হরদীপ সিংহ পুরী, মনসুখ মাণ্ডবীয়, সিআর পাটিল, নিতিন গডকড়ী, পীযূষ গয়াল, সর্বানন্দ সোনোয়াল, প্রহ্লাদ জোশী, মনোহরলাল খট্টর, ধর্মেন্দ্র প্রধান, জুয়েল ওরাওঁ, বীরেন্দ্র কুমার, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, শিবরাজ সিংহ চৌহান, ভূপেন্দ্র যাদব, গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, গিরিরাজ সিংহ, অন্নপূর্ণা দেবী, তেলঙ্গানার জি কিষাণ রেড্ডি।
অপর পাঁচ পূর্ণমন্ত্রী হলেন তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) কিঞ্জারাপু রামমোহন নাইডু, জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) রাজীবরঞ্জন সিংহ, জনতা দল সেকুলারের (জেডিএস) এইচডি কুমারস্বামী, লোক জনশক্তি পার্টি রামবিলাসের (এলজেপি) চিরাগ পাসোয়ান, হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চার (হাম) জিতনরাম মাঝিঁ রয়েছেন।
সহযোগী দলগুলো থেকে দায়িত্ব পাওয়া ছয়জন প্রতিমন্ত্রী হলেনÑ শিবসেনার প্রতাপরাও যাদব, রাষ্ট্রীয় লোকদলের (আরএলডি) জয়ন্ত চৌধুরী, রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়া অঠওয়ালের (আরপিআই-এ) রামদাস অঠওয়ালে, জেডিইউর রামনাথ ঠাকুর, আপনা দলের (সোনেলাল) অনুপ্রিয়া পটেল, টিডিপির চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি।
পশ্চিমবঙ্গের শান্তনু ঠাকুর ও সুকান্ত মজুমদারসহ অন্যান্য রাজ্য থেকে বিজেপি দলীয় যারা প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন তারা হলেন : জিতেন্দ্র সিংহ, অর্জুন রাম মেঘওয়াল, ভগীরথ চৌধুরী, মুরলীধর মোহল, জিতিন প্রসাদ, পঙ্কজ চৌধুরী, এসপি সিংহ বঘেল, কীর্তিবর্ধন সিংহ, বিএল বর্মা, কমলেশ পাসোয়ান, শ্রীপদ নায়েক, হর্ষ মলহোত্র, ভূপতিরাজু শ্রীনিবাস বর্মা, তোখন শাহু, কৃষ্ণপাল গুজ্জর, রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহ, পবিত্র মার্গেরিটা, নিত্যানন্দ রাই ও সতীশচন্দ্র দুবে, ভি সোমান্না, শোভা কারান্ডলাজে, সুরেশ গোপী, এল মুরুগান, অজয় টামটা, রক্ষা খড়সে, বান্দি সঞ্জয় কুমার, সঞ্জয় শেঠ, দুর্গাদাস উইকে, সাবিত্রী ঠাকুর, নিমুবেন বাহ্মনিয়া। এ ছাড়া সংসদের কোনো কক্ষে সদস্য না হয়েও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন পাঞ্জাবের রভনীত সিংহ বিট্টু ও কেরালার জর্জ কুরিয়েন।
ভারতের লোকসভায় মোট আসন ৫৪৩টি। এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯৩টি আসন, এর মধ্যে বিজেপি একাই জয় পেয়েছে ২৪০ আসনে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় জোট ‘ইন্ডিয়া’ এবার ২৩৩ আসনে জয় পেয়েছে, কংগ্রেস একাই পেয়েছে ৯৯টি আসন। লোকসভায় এর আগের দুই মেয়াদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিল না, কারণ দুবারই প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ আসনেও জয় নিশ্চিত করতে পারেনি কোনো বিরোধী দল। এবার রাহুল গান্ধীকে বিরোধী দল নেতা হিসেবে মনোনীত করেছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট, তবে এখনো তা নিশ্চিত হয়নি।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৯৬৪ সালের ২৭ মে পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু। ১৯৫১-৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ৪৮৯টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৬৪টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। দলটি ১৯৫৭ সালে ৪৮৯টি আসনের মধ্যে ৩৭১টিতে জিতেছিল। ১৯৬২ সালে তারা ৩৬১টি আসন জিতেছিল।
prothomasha.com
Copy Right 2023